মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের বিচার হয়েছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বেশির ভাগই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে এবং তাদের দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। এসবই এ দেশের ইতিহাসে অনন্য ঘটনা। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ কথাও মনে রাখতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করার জন্য বিচারপ্রার্থীর পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তোলা হয়েছে; কিছু পূরণ করা হয়েছে, কিছু করা হয়নি। সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্তদের সবাইকে আটক করার দাবি অপূর্ণই রয়ে গেছে। এ অবকাশে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়েছে।
দীর্ঘকাল ধরে বিরাজমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচার জরুরি; সব অপরাধীর বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিচারপ্রক্রিয়ায় আলগা ভাব দেখা যাচ্ছে। বিচারকালে অপরাধীদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকরা কম অনাচার করেনি। অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে বাধা দেওয়া এবং তাদের ওপর হামলার অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। তাদের প্রতিহত করা, আইনের আওতায় আনা এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানে এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্তদের ওপর নজরদারির কাজটিও ঠিকমতো করা হয়নি। ফলে অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আগে থেকেই যারা পলাতক, তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি এখনো।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত ৩৭ জন ও বিচারাধীন মামলার ১৩০ জন পলাতক। আরো শতাধিক ব্যক্তি গাঢাকা দিয়েছে তদন্তের খবর পেয়ে। তদন্ত সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, ৫০টি নতুন মামলার তদন্ত চলছে। এসব মামলার শতাধিক অভিযুক্ত ব্যক্তি তদন্তের কথা জানতে পেরে পালিয়েছে। বেশির ভাগই বিদেশে পালিয়েছে, ভারতে বা পাকিস্তানে।
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার দাবিকারী পক্ষের লোকজন বলছেন, অপরাধীদের নজরদারিতে রাখার দায়িত্ব মূলত পুলিশের। হয় তারা যথাযথ নজরদারি করেনি অথবা তাদের যোগসাজশে তারা পালিয়ে যেতে পেরেছে। বিদেশে পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। আর দেশের যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁদের তৎপরতাও জোরালো নয়। বিচারপ্রক্রিয়ার কিছু বিষয়ে যথাযথ নজর যে দেওয়া হয়নি তা এসব তথ্যেই স্পষ্ট। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে হলে দ্রুত পলাতক অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনতে হবে, কাজে কেউ গাফিলতি করে থাকলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং সাক্ষীর সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।