হাসপাতালেই ডাক্তারদের আলাদা চেম্বার করে দেয়া হবে – প্রধানমন্ত্রী

68

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা অফিস সময়ের পরে বেসরকারী হাসপাতালে বা আলাদা চেম্বারে অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেন। এখন থেকে হাসপাতালেই একটি আলাদা কর্নার করে দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে চিকিৎসকদের বাইরে যেতে না হয় এবং রোগীরাও সরকারী হাসপাতালেই সেবা পান। এছাড়াও সব সরকারী হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সরকারী কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প সভায় অনুমোদন দেয়ার সময় এসব নির্দেশনা দেন। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বর্তমান সরকারের পঞ্চম একনেক সভায় এদিন মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর পুরোটাই ব্যয় করবে সরকার।
এদিকে, সব সরকারী হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় বাধ্য হয়ে বেসরকারী হাসপাতালগুলোর মুখাপেক্ষী হতে হয় মানুষজনকে। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের কারণে সাধারণ মানুষ এ সেবা নিতে পারে না। সাধারণ মানুষ কম টাকায় যাতে আইসিইউর সুবিধা পেতে পারেন সেই জন্য সব সরকারী হাসপাতালে এর ব্যবস্থা করতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সরকারী হাসপাতালেই যাতে চিকিৎসকরা একটা উইং (শাখা) নিয়ে বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে। যেমন আছে বারডেমে। সেখানে একটা উইং আছে, যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বসেন। যাতে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসও হলো আবার রোগীরা ভাল সেবাও পেল।
এছাড়াও রোগীরা হাসপাতালে যেন আলো-বাতাস পায় এমনভাবে হাসপাতালের ডিজাইন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখন হাসপাতালের ডিজাইন দেখলে মনে হয় বাসা বা ফ্ল্যাট। মানে একটা হোটেল হোটেল ভাব। হাসপাতালকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন করেন। যাতে রোগীরা একটু আলো-বাতাস পেতে পারে।
প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশে চেন্নাইয়ে তৈরি হাসপাতালের ডিজাইন দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালে পর্যাপ্ত আলো বাতাস থাকতে হবে, মনোরম পরিবেশ করতে বাগান করতে হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও ডে-কেয়ার সেন্টারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, কিছু কিছু নার্স বা সিস্টার আছেন যাদের শিশু সন্তান আছে, এছাড়া কিছু কিছু রোগীও বাচ্চা কোলে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। এদের জন্য একটা ডে-কেয়ার সেন্টার করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও এদিন আরও একটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিডনি, হার্ট, ক্যান্সার ও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য ধাপে ধাপে আলাদা আলাদা ব্লক তৈরি করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা কিন্তু রাতারাতি হবে না। তবে এখন থেকেই শুরু করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন থেকে যেসব হাসপাতাল তৈরি করা হবে সেগুলো অবশ্যই বর্জ্যশোধনাগার বা ইটিপি স্থাপন করতে হবে। এদিন, অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চার কাউয়া) থেকে ভোলা (ইলিশা ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে। এছাড়াও অনুমোদন দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘শরীয়তপুর (মনোহর বাজার) ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক সড়ক (আর-৮৬০) উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৮৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘নীলফামারী-ডোমার (জেড-৫০০৩) সড়ক (নীলফামারী অংশ) এবং ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর (জেড-৫৮৫৭) সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৫০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা নকশিপল্লী, জামালপুর (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭২২ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
এই প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিকূলতা ও পুনর্বাসনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পী ও শিল্প। তাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব শিল্পীদের একই ছাদের নিচে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া আরেক প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয়ের। ‘লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, লেবু জাতীয় যত ফসল বা ফল আছে যেমন জাম্বুরাও এর মধ্যে পরে এসব দেশীয় ফলগুলোকে সম্প্রসারণ করা হবে। একনেক সভায় একনেক-এর বিকল্প চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন।