দলপ্রেমী-নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ॥ কানাইঘাটে নৌকার প্রার্থীরা নৌকা মার্কার বিপক্ষে

42

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু উক্ত নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আ’লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দলীয় সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল মুমিন চৌধুরীর নৌকা মার্কার বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিগত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা মার্কার অধিকাংশ প্রার্থীরা এ নির্বাচনে আ’লীগের (বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের (মোটর সাইকেল) মার্কা’র পক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা করায় দলের নৌকা প্রেমী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ছিলেন, তারা আজ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় মেনে নিতে পারছেন না দলের বেশীর ভাগ নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী যারা আজ নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলের প্রার্থী কে পরাজিত করতে মাঠে নেমেছে তারা খন্দকার মস্তাকের দুষর, সুবিধাবাদী। এরা দল, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের সৈনিক হতে পারে না। এরা একদিন দলের নেতাকর্মীদের ঘৃনার পাত্র হয়ে আওয়ামীলীগ থেকে হারিয়ে যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিগত কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কানাইঘাট ২নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে হাজী আলমাছ উদ্দিন, সদর ইউনিয়ন থেকে হোসেন অহমদ, ৫নং বড়চতুল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মুবশ্বির আলী চাচাই, ৮নং ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন থেকে নুরুল হক, ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে তুহেল আহমদ নৌকা মার্কা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এবং ৪নং সাতবাক ইউনিয়ন থেকে বর্তমান উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আ’লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশ, ৭নং দক্ষিণ বানীগ্রাম ইউনিয়ন থেকে মাসুদ আহমদ, ২নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন থেকে জেমসলিও ফারগুশন নানকা ও ৩নং দিঘীরপার ইউনিয়ন থেকে আলী হোসেন কাজল নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। কিন্তু আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে সাতবাক ইউপি থেকে বিজয়ী প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। তার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী আলী হোসেন কাজল একমাত্র, দলীয় সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুমিন চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। অসুস্থ লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেমসলিও ফারগুশ নানকা ও নৌকা প্রতীক নিয়ে রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে পরাজিত প্রার্থী তুহেল আহমদ নির্বাচনী প্রচারণায় বর্তমানে নিরব রয়েছেন। এ দু’জন দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কোন ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন না। আর নৌকা মার্কা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী মাসুদ আহমদ সহ ৫ জন পরাজিত প্রার্থী প্রকাশ্যে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে নৌকা প্রেমী আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সুবিধাবাদী এসব নেতাদের আচারনে তারা হতবাক হয়েছেন। তৃণমূলের অনেক কর্মী সমর্থকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা আ’লীগ ও বঙ্গবন্ধুর মার্কা নৌকাকে অন্ধের মতো ভাল বেসে থাকি কোন ধরনের চাওয়া পাওয়ার আশায় নয়। কিন্তু যারা দলের নেতা পরিচয় দিয়ে নাম ভাংগিয়ে নানা অপকর্ম ও আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন সেই সব সুবিধাবাদী নেতারা আজ বিবেক বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ গ্র“পিং রাজনীতি কে প্রাধান্য দিয়ে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সুবিধাবাদী কিছু নেতা তলে তলে নৌকার প্রার্থী মুমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীদের নৌকায় ভোট না দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের মোটর সাইকেল মার্কা কে বিজয়ী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যা নির্বাচনী মাঠে প্রতীয়মান হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে দলের একনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদধারী একজন প্রভাবশালী নেতা এবং তার অনুসারী জেলা ছাত্রলীগের তেলীহাওর ব্লকের কয়েকজন প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা কানাইঘাটে এসে তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নৌকায় ভোট না দিয়ে মস্তাক আহমদ পলাশ কে বিজয়ী করার জন নির্দেশ দেন। এসব বৈঠকের খবর নৌকা মার্কা সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বৈঠকারী এসব নেতাদের নির্দেশে পেয়ে যারা কিছুদিন আগে নৌকা মার্কার প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন গত ২ দিন থেকে তারা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মোটর সাইকেলের পক্ষে জোরালো প্রচারণায় নেমে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নৌকার সমর্থকরা নানা ধরনের কমেন্ট করছেন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে বিদ্রোহী প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশ কর্মী সমর্থকদের কাছে টানতে নানা ধরনের কৌশলী ভূমিকা নেওয়ায় প্রচারনায় আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুমিন চৌধুরী কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন অনেক সাধারন ভোটাররা। তবে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দু’জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন সারাদেশে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন মূলত আ’লীগের নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেউ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আবার কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন তারা সবাই আ’লীগ করেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অনেক জায়গায় প্রভাবশালী নেতা ও তৃণমূলের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এতে দলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বাধা নিষেধ নেই। এখানে প্রতীক মুখ্য বিষয় নয় এটা জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচন।