অগ্নিঝরা মার্চ

64

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাঞ্জাব পাকিস্তান ফ্রন্ট (পিপিএফ) ভুট্টোর ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন। তারা বাংলার জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানান। শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ও বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়। ঢাকা ছাড়াও রংপুর এবং সিলেটে কারফিউ জারি করা হয়। রংপুরে পাক সেনাবাহিনী ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে দুপুর আড়াইটা থেকে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়। সিলেটে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। ঢাকায় কারফিউর মেয়াদ শিথিল করে রাত ১০টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বলবৎ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করব। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলেটে আহতদের জীবন রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি ব্লাড ব্যাংকে রক্তদানের উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বাংলার স্বাধিকার বিরোধী বিশেষ মহল নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলন বিপথগামী করার এমন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথমদিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানী আর্মিদের দ্বারা চট্টগ্রামে প্রথম গণহত্যা শুরু করা হয়। সকাল ৯টার দিকে পাহাড়তলীর ওয়ারলেস কলোনিতে ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান বিরোধী মিছিলকে কেন্দ্র করে বাঙালি-বিহারী সংঘর্ষ শুরু হয়। ওয়ারলেস কলোনিতে বিহারীরা সংখ্যায় বেশি ছিল। বিহারীরা কলোনির বাঙালিদের ঘর-দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাট করা হয় বাঙালিদের ঘরবাড়ি-দোকানপাট-সম্পত্তি। গরু জবাইয়ের মতো জবাই করা হয় বাঙালিদের। মেয়েদের ধরে নিয়ে গ্যাং রেপ করে বিহারীরা। বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয় পুরো কলোনি। এদিন প্রায় ২৫০ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। আহত হয় প্রায় পাঁচ শতাধিক বাঙালি। পাহাড়তলীর ওয়ারলেস কলোনির বাঙালি নিধনের খবর পুরো চট্টগ্রাম শহরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিশোধের নেশায় ফুসে উঠে বাঙালিরা। দুপুরে লালদীঘিতে শোকসভা করা হয়। শোকসভায় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, মৌলবি সৈয়দ আহমেদ, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। কিন্তু সংগ্রামের আগুন লেগে গেছে সারা শহরে। দেওয়ানহাট, ঈদগাঁ, হালিশহর, পাহাড়তলীতে কয়েকটি বাঙালি-বিহারী সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এ সময় আরও একটি খবর সবাইকে বিচলিত করে দেয়, পাহাড়তলীর ওয়ারলেস কলোনির সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান আর্মির কিছু সৈন্য বেসামরিক পোশাকে বাঙালি হত্যায় অংশ নিয়েছিল।