কাজিরবাজার ডেস্ক :
একটানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের সরকার শাসক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে।’
রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের (বিআইআরসি) ‘জাতীয় পতাকা প্রদান-২০১৯’অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সে জন্য আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
‘চতুর্থবারের মতো এবং একটানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করার সুযোগ পাওয়ায় আমি দেশবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমাদের সরকার শাসক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়।’
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এমন দৃঢ় প্রত্যয় রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করেছি। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে আমরা ছিট মহলের সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। জলে, স্থলে ও আকাশসীমায় বর্তমানে আমাদের অবস্থান সুষ্পষ্ট ও সুর্নিদিষ্ট হয়েছে।’
‘সবসময় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়েছি’
সেবাবাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সেবা করার জন্য সেনাবাহিনীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে এটা আমার বিশ্বাস।’
‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। এই সুনাম অক্ষুণ্নের আপনারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, ‘যখনই প্রয়োজন তখনই সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে এটাই আমার বিশ্বাস। যেকোনও হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক।’
‘পতাকার মান রক্ষা করা পবিত্র দায়িত্ব’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পতাকা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সকল সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব।’
সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন এবং কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন। পতাকা পাওয়ায় আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সালাম জানান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। এছাড়া জাতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর যে সকল সদস্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে কাজ করছেন তাদেরকেও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্বেও একটি শক্তিশালী স্বশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে একটি শান্তিরক্ষা নীতি প্রনয়ণ করেন। তার সুদূরপ্রসারি এ প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও দেশের বাইরে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদাতিক বাহিনীর গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাশাপাশি পদাতিক বাহিনীর দ্বিতীয় রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আমরাই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছি।’
‘১৯৯৯ সালে আমি বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট গঠনের ব্যাপারে ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন প্রদান করি। ২০০১ সালের ২১শে এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করি। ২০১১ সালে আমি এ রেজিমেন্টকে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পতাকা প্রদান করি। বর্তমানে এই রেজিমেন্টে দুটি প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ ৪৩টি ইউনিট রয়েছে।’
‘আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর’
একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আধুনিক বাহিনী গড়ে তুলতে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রনয়ণ করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সব সময়ই জাতির গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে।’
‘বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি, যোগাযোগের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, ফেনির মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।’
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি হেলেকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছেন। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শহিদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড জাতীয় পতাকা কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং ওই চার বীরকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌ-বাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীর অন্য সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, ফজলে হোসেন বাদশা, আয়েন উদ্দিন, এনামুল হক, ডা. মনসুর রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার প্রমুখ।