স্পোর্টস ডেস্ক :
হ্যামিল্টন টেস্ট অল্পের জন্য পাঁচদিনে গড়াল না। অল্পের জন্য ইনিংস হারও এড়ানো গেল না। তবে চতুর্থদিনে সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যে ব্যাট হাতে বীরত্ব দেখালেন তা প্রাপ্তির খাতায় ঠিকই যোগ হয়ে থাকল। দুই সেঞ্চুরিয়ানের বীরত্বের পরও ইনিংস হার হলো। বাকি ব্যাটসম্যানরা যে কিছুই করতে পারেননি। আর তাই ইনিংস ও ৫২ রানের হার হলো বাংলাদেশের। সৌম্যের ১৪৯ ও রিয়াদের ১৪৬ অসাধারণ সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৯ রান করতে পারল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের যা দ্বিতীয়সেরা স্কোর। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারায় সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ।
আফসোস থেকে গেল সেই প্রথম ইনিংস নিয়েই। প্রথম ইনিংসে যদি সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবালের সঙ্গে আরেকজন ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারতেন তাহলে অনায়াসেই ইনিংস হার এড়ানো যেত। খেলাও পাঁচদিনে গড়াত। কিন্তু ২৩৪ রানের বেশি প্রথম ইনিংসে করতে পারল না বাংলাদেশ। এরপর নিউজিল্যান্ডের টম লাথাম, জিত র্যাভালের সেঞ্চুরি ও কেন উইলিয়ামসনের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেট হারিয়ে ৭১৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা রানের পাহাড় গড়ে। তখনই বাংলাদেশের ইনিংস হারের সম্ভাবনা জেগে যায়। ইনিংস হার এড়াতে দ্বিতীয় ইনিংসে যে ৪৮১ রান করতে হতো।
এত রানের চাপ কী বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা নিতে পারবেন? প্রথম ইনিংসে যেভাবে ধসে গেছে ইনিংস, দ্বিতীয় ইনিংসে কী অনেক ভাল কিছু করা সম্ভব? তৃতীয়দিন ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ১৭৪ রানে দিন শেষ করল বাংলাদেশ তখনও ইনিংস হার এড়াতে ৩০৭ রান লাগত। বোঝাই যাচ্ছিল তৃতীয়দিন শেষে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকা সৌম্য ও ১৫ রানে অপরাজিত থাকা রিয়াদের সঙ্গে লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের জন্য তা কতটা কঠিন। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার, গ্র্যান্ডহোমরা যেভাবে ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করেছিলেন তাতে অনেক কঠিন। কিন্তু সৌম্য ও রিয়াদ দেখিয়ে দিলেন যদি আরেকজন ব্যাটসম্যান হাল ধরতেন তাহলে ইনিংস হার এড়ানো সহজই ছিল।
দুইজন মিলে নিউজিল্যান্ড বোলারদের ভোগাতে থাকেন। চতুর্থদিন প্রথম সেশনেতো আর কোন উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ। কিউই বোলারদের তৈরি করা চাপ কি নিখুঁতভাবে সামাল দেন সৌম্য ও মাহমুদুল্লাহ। সৌম্যতো মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগেই ৯৪ রানে সেঞ্চুরি করে ফেলেন। বাংলাদেশের পক্ষে তামিম ইকবালের মতো ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকও হন সৌম্য। এত চাপের মধ্যে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। রান করতে পারছিলেন না। ভীষণ চাপে ছিলেন। সমালোচনাও সহ্য করতে হচ্ছিল। কিন্তু সৌম্য গুরুত্বপূর্ণ সময়েই হাল ধরে দেখিয়ে দিলেন।
সৌম্যের সঙ্গে রিয়াদও সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে একদিকে সৌম্য যেমন ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে এগিয়ে যেতে থাকেন, সেখানে রিয়াদ একটু ধীরে পথ চলেন। ১৮৩ বলে সেঞ্চুরি করেন রিয়াদ। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন। মহাবিপদের সময় দলের হাল ধরেন। দুইজন মিলে দেখতে দেখতে দলকে ৩০০ রানে নিয়ে যান। ৩৫০ রানও অতিক্রম করেন। ভরসার প্রতিদান দেন। এমন সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন মনে হচ্ছিল চতুর্থদিন শেষ হবে। ইনিংস হারও এগিয়ে যাবে। দুইজন মিলে দাপটের সঙ্গেই খেলতে থাকেন। আর নিউজিল্যান্ডের চিন্তা বাড়তে থাকে। কিন্তু দলের যখন ৩৬১ রান হয় তখনই সৌম্য আউট হয়ে যান। বোল্টের লাইনের বলটিতে বোল্ড হন। ১৭১ বলে ২১ চার ও ৫ ছক্কায় দেড় শ’ রান করা থেকে ১ রান দূরে থাকা সৌম্য সাজঘরে ফেরেন। তাতে করে সৌম্য-রিয়াদের জুটি ২৩৫ রানের বেশি যেতে পারেনি। তবে সৌম্য আউট হলেও যে ব্যাটিং করেছেন তাতেই প্রশংসায় ভাসছেন।
প্রশংসা কুড়াচ্ছেন রিয়াদও। সৌম্য একদিকে দুর্দান্ত সব স্ট্রোক খেলছিলেন। আরেকদিকে যদি রিয়াদ ধৈর্য ধরে আঁকড়ে না থাকতেন তাহলে আরও আগেই ইনিংস শেষ হয়ে যেতে পারত। তাই রিয়াদের প্রশংসাও চতুর্দিকে। কিন্তু লিটন, মিরাজের কাছ থেকে যে আশা করা হয়েছিল তার কিছুই করে দেখাতে পারেননি তারা। যদি লিটন ও মিরাজ কিছুটা পথ রিয়াদের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারতেন তাহলেই ইনিংস হার এড়ানো সম্ভব ছিল। কিন্তু দুইজনই ১ রানের বেশি করতে পারেননি। আবু জায়েদ রাহী, সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেনরা স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নন। তারা পেসার। লিটন, মিরাজই যেখানে কিছু করতে পারেননি রাহী, খালেদ, এবাদত আর কি করবেন। এরপরও রাহীর সঙ্গে যে রিয়াদের ৩৩ রানের জুটি হয়েছে তাতে দল ৪০০ রানের ওপরে চলে যায়।
শেষ পর্যন্ত রিয়াদ দলের ৪২৯ রানে সাউদির বলে আউট হয়ে যান। ২২৯ বলে ২১ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে রিয়াদ সাজঘরে ফিরতেই এবাদতও আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের ইনিংস ৪২৯ রানেই শেষ হয়। ইনিংস ব্যবধান এড়াতে আর মাত্র ৫২ রান দূরে থাকতেই বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায়। ২০০৮ সালের পর আবারও নিউজিল্যান্ডের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হারও হয় বাংলাদেশের। তবে এ হারের পরও সৌম্য ও রিয়াদের ব্যাটিং বীরত্বই সবার মুখে। তারা যে বিপদে পড়া অবস্থা থেকে দলকে অনেক পথ নিয়ে গেছেন। ম্যাচটিতে আমেজ এনে দিয়েছেন।