উন্নয়নের সুষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকলেও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এত দিন শহরকেন্দ্রিক তৎপরতা চলেছে, এখন গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার সূচনা করতে চায় সরকার। এ ক্ষেত্রে অনিবাসী তথা প্রবাসী বাংলাদেশি, যাঁদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে, বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে সরকারপ্রধান মনে করেন। তাঁরা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন, নীতি ও পদ্ধতি প্রণয়নে সহায়তা করতে পারেন। দেশের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়ার জন্য তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘কনভেনশন অন এনআরবি ইঞ্জিনিয়ারস’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। ৩০টি দেশ থেকে আসা তিন শতাধিক বাংলাদেশি প্রকৌশলী দুদিনের এ সম্মেলনে অংশ নেন। এটি তাঁদের প্রথম সম্মেলন। এ আয়োজনে সরকারের অংশগ্রহণ রয়েছে।
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আছেন এটা ঠিক কিন্তু এই মাটির সন্তান আপনারা।…এটাই আপনাদের মূল জায়গা। এটাই আপনাদের শিকড়। আর এই শিকড়ের সন্ধানেই আপনারা আজকে এসেছেন। …আপনাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ তিনি জানান, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে। সেখানে বিদেশিরা বিনিয়োগ করবেন বলে সরকার আশা করে; প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রবাসীদের সুবিধার্থে তিনটি ব্যাংক করা হয়েছে। এসব সুযোগ-সুবিধা তাঁরা কাজে লাগাতে পারেন। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় হলেও শুধু একটি পণ্যের রপ্তানির ওপর নির্ভর করে দেশ চলতে পারে না। রপ্তানির বহুমুখীকরণ দরকার। পাট, সামুদ্রিক মাছ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আইসিটি প্রভৃতি খাতের পণ্য-রপ্তানি আরো বাড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা, বিশেষ করে প্রকৌশলীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা দেশের তথ্য-প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্পোৎপাদন, যোগাযোগ এবং সমুদ্রসম্পদ আহরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাতে দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে।
প্রবাসীরাও দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে আগ্রহী। এ জন্য তাঁরা প্ল্যাটফর্ম চান। মেধা ও দক্ষতা দিয়ে যাঁরা বিদেশে বিভিন্ন খাতে সফল হয়েছেন, তাঁরা এখন দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে চান। তাঁরা মেধা ও পুঁজি দুটিই বিনিয়োগ করতে চান। এখন শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলোতে যানজট নিরসন এবং বিনিয়োগ-প্রক্রিয়ার সহজীকরণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অর্থাৎ সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ চান তাঁরা। প্রবাসীরা পরিবহন ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা, নগর উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। সরকারপক্ষ থেকে প্রবাসীদের দাবি মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।