ওষুধ এমন একটি পণ্য, যা সরাসরি মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে জড়িত। ওষুধে যদি ভেজাল করা হয়, মান বজায় রাখা না হয়, তাহলে সেই ওষুধ খেয়ে রোগ সারবে না, বরং রোগী মারা যেতে পারে। আর যদি সেই ওষুধে জেনেশুনে বিষাক্ত উপাদান মেশানো হয়, তাহলে সেটি হবে জেনেশুনে হত্যার শামিল। ১৯৯২ সালে দেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি প্যারাসিটামল সেবন করে কয়েক শ শিশু মারা গিয়েছিল।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র বলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের ৩.৭৫ শতাংশ ও ভর্তি রোগীদের ৩.৪০ শতাংশ চিকিৎসা নিতে আসে ওষুধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে। অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ১১.৯ শতাংশ রোগী ওষুধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে আসে। আবার এমনও ঘটেছে, ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক ভুল ওষুধ দেওয়ায় কখনো কখনো রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সব ওষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে। কিন্তু ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে চিকিৎসককে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত রোগীরা কোনো না কোনো সময় এমন কোনো ওষুধ সেবন করেছে যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এমন ওষুধ সেবন করেছে, যা তার শরীরে সহনশীল নয় বা ওই ওষুধ তার প্রয়োজন ছিল না। আবার ভেজাল ওষুধও তৈরি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কখনো কখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অনেক নকল ওষুধ ফ্যাক্টরির সন্ধান মেলে। কিছুদিন পর দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট চক্র নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। দুর্বল আইনের কারণে অনেকেই পার পেয়ে যায়। মামলা ও তদন্তেও গাফিলতি থাকে। অনেক মামলা শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে টেকে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলাও হয় না। ফলে গুরু পাপে লঘু দণ্ড হয়ে যাচ্ছে অনেকের। আর এই লঘু দণ্ডের বিধানের সুযোগ নিয়েই জীবন রক্ষাকারী ওষুধে অবলীলায় ভেজাল বা বিষ মিশিয়ে বেশি মুনাফার আয়োজন করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজেদের ঘরে লাভের টাকা তুলতে ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করা হচ্ছে।
ভেজাল ও নকল ওষুধ প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। ভেজাল ও নকল ওষুধ বন্ধ করতে না পারলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক বছরে ওষুধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ায় দেশে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে দুটি ঘটনা। ১৮টি ঘটনা তদন্তাধীন।
ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সততার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওষুধ তৈরি ও বিপণন অন্য ব্যবসার মতো নয়। আমরা আশা করব জীবন রক্ষার ওষুধ জীবনহানির কারণ হবে না।