করোনাভাইরাসের টিকাদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। করোনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে টিকা কর্মসূচীর। নিঃসন্দেহে দেশের স্বাস্থ্য খাতে এটি একটি বড় সাফল্য। বিশ^ব্যপী করোনা মহামারীর মোকাবেলায় টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রথম দফায় তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য চুক্তি করেছিল ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। প্রথম দফায় ৫০ লাখ টিকার একটি চালান দেশে এসে পৌঁছে। এই টিকা দিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রম। বিশে^র অনেক উন্নত দেশ যখন টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি তখন বাংলাদেশে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। ভারতে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণে মোদি সরকার টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয় টিকা কার্যক্রম চালু রাখা নিয়ে। দ্রুত বিশ^ব্যাপী ব্যাপক টিকা কূটনীতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টিকার আমদানি সম্ভব হয়। এর পর আর কোন সঙ্কটই মোকাবেলা করতে হয়নি স্বাস্থ্য বিভাগকে।
শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন, দেশের সকল মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হবে বিনা মূল্যে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বেসরকারী খাতে টিকা আমদানি ও সরবরাহের অনুমোদন দেয়া হয়নি। কেউ চাইলেও টাকা দিয়ে কিনে টিকা নিতে পারে না। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ তৈরি করেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ‘সুরক্ষা’ এ্যাপস। এই আধুনিক এ্যাপসের কারণে টিকা কার্যক্রম চলেছে সুশৃঙ্খলভাবে। সুরক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করে দেশের যে কোন নাগরিক বিনা মূল্যে টিকা নিতে পারছে। টিকা কার্যক্রমের সাফল্যে এই এ্যাপসের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ১২ কোটি ৬৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭১৮ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ১৬৯ জন। আর বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৭ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার চার মাস পর কেন্দ্রে গেলেই দেয়া হচ্ছে বুস্টার ডোজ।
টিকা কার্যক্রমের সাফল্যে দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। তবে একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, করোনা এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়নি। পূর্ব ও পশ্চিমের সকল দেশে এখনও করোনা তান্ডব চালাচ্ছে। ন্ডযুক্তরাষ্ট্র, উইরোপের প্রায় সকল দেশ, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এমনকি খুব কাছের থাইল্যান্ডেও সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক। এর মধ্যেই চালু হয়েছে আকাশপথসহ সকল যোগাযোগ। চারদিকের এই সংক্রমণে স্বাভাবিক ভাবেই আশঙ্কা থাকে, আবার যে কোন সময় এই উপমহাদেশেও বাড়তে পারে সংক্রমণ। এজন্য বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হলেও দেশের মনুষকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে মাস্ক। না হলে আবারও থাকবে বিপর্যয়ের শঙ্কা।