কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হোক

61

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশেই নির্ভর করে সে দেশের মোট শ্রমশক্তির কর্মসংস্থানের ওপর। ‘কাঙ্ক্ষিত সামাজিক উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি : সমস্যা ও প্রাধান্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে গত রবিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ যে তথ্য তুলে ধরেছে, তা সুখকর নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান না হওয়ায় প্রতিবছর নতুন করে বেকার হচ্ছে আট লাখ কর্মক্ষম মানুষ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও সে তুলনায় কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রবৃদ্ধির সুফল সর্বত্র সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে সর্বোচ্চ ধনী ও সর্বনিম্ন দরিদ্রের মধ্যে মারাত্মক আয়বৈষম্য তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ২১ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু প্রতিবছর কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৩ লাখের মতো। গত বছর প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে বেকারের ৪০ শতাংশই শিক্ষিত। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, দেশে কাজের চাহিদা আছে; কিন্তু দক্ষ লোক নেই। তাঁরা মনে করেন, বেকারদের শিক্ষা আছে; কিন্তু শিক্ষার মান খারাপ, দক্ষতাও খুব বেশি নেই। যে চাকরিদাতা দেশের বেকারদের চাকরি দিয়ে বোঝা তৈরি করতে চান না, তিনিই আবার বিদেশ থেকে লোক এনে কাজ করাচ্ছেন। ফলে দেশের কর্মক্ষম শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ কাজের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ‘বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের প্রবণতা ২০১৮’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান মাত্র ১০ শতাংশ। চিত্রটি সুখকর নয় এ কারণে যে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান এক ধরনের দুর্বলতা নির্দেশ করে। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নির্দেশ করে। আর সে কারণেই দেশের সার্বিক উন্নয়নে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। সিপিডির প্রতিবেদনে গত ২৫ বছরে ধনী ও দরিদ্রের আয়বৈষম্যের তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধির সুবিধা সমানভাবে বিতরণ না হওয়ায় বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে।
সরকার দেশের উন্নয়ন চায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বলে অর্থনীতিবিদদের অভিমত। এ অবস্থা থেকে উন্নয়নকে টেকসই ও স্থায়ী রূপ দিতে হলে অবশ্যই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন কর্মপরিবেশের উপযোগী একটি শ্রমশক্তিও তৈরি করতে হবে। এর জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার। তবে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষার মান। একই সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নতুন জোয়ার আসবে বলে আমরা মনে করি।