সরকারী বেসরকারী সব হজ্বযাত্রায় খরচ বেড়েছে

70

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারী-বেসরকারী দুই ধরনের হজ্বযাত্রায় খরচ বেড়েছে। এ নিয়ে টানা দুই বছর হজ্বে যাওয়ার খরচ বাড়ল। সরকারী ব্যবস্থাপনায় দু’টি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ্ব পালনের বিধান রেখে ‘হজ্ব প্যাকেজ, ১৪৪০ হিজরী/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ’ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। এবার হজ্ব পালনে প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। একই সঙ্গে সংশোধিত ‘জাতীয় হজ্ব ও ওমরাহ নীতি ১৪৩৯ (২০১৮)’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রী সভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
গত হজ্বের তুলনায় প্যাকেজ-১ এ খরচ বেড়েছে ২০ হাজার ৫৭১ টাকা ও প্যাকেজ-২ এ বেড়েছে ১২ হাজার ৬৪১ টাকা। গত হজ্বে প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে হজ্ব পালনে খরচ হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা। অন্যদিকে প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে খরচ হয় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১০ আগষ্ট (৯ জিলহজ্ব) পবিত্র হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজ্বচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ মুসল্লি হজ্ব করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ ও অবশিষ্ট এক লাখ ২০ হাজার বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্ব করার সুযোগ পাবেন।
বেসরকারী হজ্ব এজেন্সিগুলোও দু’টি প্যাকেজ করতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এজেন্সিগুলো প্যাকেজ-২ এর জন্য নির্ধারিত ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার নিচে কোন প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না। তিনি বলেন, বাড়ি ভাড়ার সুবিধার ওপর ভিত্তি করে দু’টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। বাড়ি কাবা শরীফের ৫০০ মিটারের মধ্যে প্যাকেজ-১ আর সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি হচ্ছে প্যাকেজ-২। মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্যাকেজ-১ এর হজ্বযাত্রীরা ট্রেন সুবিধা পাবেন।
এবার হজ্বের খরচ কোন ক্ষেত্রে বেড়েছে, কোন ক্ষেত্রে কমেছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এবার বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। এই ভাড়া গতবারের চেয়ে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কম। গত বছর বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা। এবার বাড়ি ভাড়া একটু বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, যে ভাড়া এক লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ টাকা ছিল তা এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা হয়েছে। ১০ হাজার টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, হজ্বযাত্রীদের কোরবানির টাকা এবারও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। কোরবানির টাকা এবার বেড়েছে। আগে ছিল ৪৭৫ রিয়াল এবার হয়েছে ৫২৫ রিয়াল। ৫০ রিয়াল বাড়িয়েছে সৌদি সরকার।
এছাড়া সৌদি হজ্ব মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রতি হজ্বযাত্রীর জন্য ৫০ সৌদি রিয়াল এবং জেনারেল কার সিন্ডিকেটের অনুকূলে ১৮ রিয়াল বাবদ মোট ৬৮ রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ অর্থাৎ এক হাজার ৫৩০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটা প্রত্যেক হজ্বযাত্রীর গ্যারান্টি। এটা ওখানে এডজাস্টমেন্টের সুযোগ আছে। সৌদি সরকারের ট্রেন সুবিধা গ্রহণকারী হাজীদের ২৪ হাজার ৯৮১ টাকা ও অন্যান্য হাজীদের ১৯ হাজার ২৫ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ভাড়া বাবদ বাড়ানো হয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এবার একটা নতুন প্রস্তাব আছে, সৌদি আরব মিনায় তাঁবুতে বহুতল বিশিষ্ট খাটের ব্যবস্থা করবে। যদি এই ব্যবস্থা করা হয় তবে প্রত্যেক হজ্বযাত্রীকে ৪ হাজার ১৬ টাকা বাড়তি দিতে হবে। এখন সেখানে ফ্লোরিং করা হয়। যদিও তারা বহুতল খাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি। এলে দিতে হবে। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এই বছরের হজের অনুসরণীয় বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে এমআরপির পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে।
এবারও একটি হজ্ব এজেন্সি সর্বনিম্ন ১৫০ ও সর্বোচ্চ ৩০০ হজ্বযাত্রী পাঠাতে পারবে। এক ফ্লাইটে তিনটি মোয়াল্লেমের বেশি হজ্বযাত্রী দেয়া যাবে না। শফিউল আলম আরও বলেন, যে সব ব্যক্তি দু’বার বা এর বেশি হজ্ব করেছেন বা ভিসা পেয়েছিলেন কিন্তু হজ্বে যেতে পারেননি তাদের মধ্যে যারা এ বছর হজ্বে যাবেন তাদের সৌদি সরকারের আরোপ করা ২ হাজার ১০০ রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এটা প্যানাল্টি, ডিসকারেজিং।
নতুন হজ্ব ও ওমরাহ নীতি : নতুন জাতীয় হজ্ব ও ওমরাহ নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, প্রচারের জন্য আগে শুধু ওয়েবসাইটে দেয়া হতো। এখন একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি আকারে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশসহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মাধ্যমে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
আগে নিয়ম ছিল ৪৫ হজ্বযাত্রীর জন্য একজন গাইড। সৌদি আরবের বাসে সাকুল্যে ৪৫ ব্যক্তি ধরে। একজনও বেশি নেয়া যায় না। তাই এখন ৪৪ জনের জন্য একজন গাইড নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধিত হজ্বযাত্রীর সম্মতি ছাড়া তার স্থানে অন্য কাউকে প্রতিস্থাপন করা যাবে না জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থ ছাড়া রিপ্লেসমেন্ট হবে না, রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে এবং জীবিত থাকলে সম্মতি লাগবে।
আগে ছিল ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী আর্থিক, দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজ্বে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এখন আরেকটু এক্সপ্লেইন করা হয়েছে ওখানে। সেখানে এখন বলা হয়েছে আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান এবং মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি হজ্বে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, যদি একাধিক এজেন্সি সমন্বিতভাবে হজ্ব কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় তবে এজেন্সিগুলোকে হজ্ব পরিচালকের উপস্থিতিতে পারস্পরিক লিখিত সম্মতির ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রদানকারী এজেন্সি নির্ধারণ করা হবে। কারণ এটা নিয়ে অনেক সময় এজেন্সিগুলোর মধ্যে মনোমালিন্য হয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ্ব অফিসে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য নতুন নীতিতে বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এখানে অনেক লোক লাগে কিন্তু লোক নেই। এজন্য সেখানে সর্বোচ্চ ষষ্ঠ গ্রেডে দু’জন এবং ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে ৫ জন কর্মচারী সাময়িকভাবে সংযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
আগের নীতিমালায় রমজান মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত ই-হজ্বের চুক্তিপত্র ঢাকায় পাঠানোর নিয়ম থাকলেও এখন এটা রমজান মাসের আগেই করতে হবে। নীতিতে নতুন একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে যে, প্রবাসী নাগরিকদের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া যাবে। অবৈতনিক এসব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হলে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী হজ্বযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ক্যাটারিংয়ের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, হজ্বযাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে সহজে হোটেলে পাঠানোর সুবিধার্থে পাসপোর্টের পিছনে বাড়ির ঠিকানার স্টিকার ও বিভিন্ন বাড়ির হজ্বযাত্রী সহজে শনাক্ত করার জন্য লাল, সবুজ, হলুদ, নীল, গোলাপী রংয়ের কাগজ লাগিয়ে দেয়া হবে।
হজ্ব গাইডের ৫০ ভাগ সৌদি আরব থেকে নিয়োগ দেয়া যাবে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় বা হজ্ব পালন করেছেন এমন অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের প্রেষণে মৌসুম হজ্ব অফিসার নিয়োগ করা হবে। নীতি অনুযায়ী বিমানভাড়া বাবদ জমা করা অর্থ সরাসরি এয়ারলাইন্স বরাবর পে-অর্ডার ছাড়া অন্য কোনভাবে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে হজ্বযাত্রীদের মতো ওমরাহ যাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। ওমরাহ এজেন্সিকে হজ্ব পরিচালকের কাছে যাত্রী প্রত্যাবর্তন প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যাতে কেউ থেকে না যায়। এ বিষয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।