জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে – প্রধানমন্ত্রী

146
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত ৫০০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমউন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যখন আমরা উন্নয়নের কথা বলি তখন আমরা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথাই বলি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫শ’ শিক্ষার্থীকে অনুষ্ঠানে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এখানে কাউকে এটা মনে করলে চলবে না যে, আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বা আমরা অবহেলিত সেটা ভাবলে চলবে না। সকলকে ভাবতে হবে, এই দেশের নাগরিক সবাই এবং প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। সকলেই সমান অধিকার ভোগ করবে বাংলাদেশে, যোগ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মবর্ণজাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার থাকবে এবং আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য এবং দেশটা আমাদের সকলের কথাটা মনে রেখে যার যার ক্ষেত্রে সবাইকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ সাজ্জাদুল হাসান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) খলিলুর রহমান। বুয়েটের ও বরগুনার সাঁওতাল আদিবাসী মিয়াট বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
এছাড়া সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, বৃত্তি উপকারভোগীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং প্রকল্পের নানাদিক সংবলিত কয়েকটি ছোট ছোট ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। আজকের অনুষ্ঠানে ৫শ’ শিক্ষার্থীকে ২৫ হাজার টাকা করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়। বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যম-িত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বৃত্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন। আগামী বছর থেকে বৃত্তিপ্রাপ্তের সংখ্যা ২ হাজারে উন্নীত করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলের অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিনসহ বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন কাজের একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যগত গুরুত্ব রয়েছে। সেই গুরুত্বটা আমাদের দিতে হবে। যার যার পেশাকে ধরে রেখে এর আধুুনিকায়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩০ লাখ ৮৭ হাজার। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ১৫ লাখের সমতলে বাস উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বৈচিত্র্যের মাঝেই ঐক্য হচ্ছে- বাংলাদেশের সংস্কৃতির এক উজ্জ্বলতম বৈশিষ্ট্য। ’ এই যে নানা মানুষ, নানান ধর্ম, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস- সবকিছু মিলে যে বৈচিত্র এটা কম দেশেই পরিলক্ষিত হয়, যোগ করেন তিনি।
তার সরকার দেশের সকল জনগোষ্ঠী এবং শ্রেণী-পেশার জনগণের উন্নয়নের সমতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষাদীক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যেন আমাদের সকল জনগগোষ্ঠী সমান সুযোগ পায়, কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, কেউ যেন দূরে পড়ে না থাকে সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য এবং এ জন্য আজকের এই বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরিধান করে বৃত্তির চেক নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসায় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কাজের প্রয়োজনে সবাই আনুষ্ঠানিক পোশাক পরবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে, নিজস্ব সংস্কৃতির স্বকীয়তাও মাঝে মাঝে প্রকাশ করার প্রয়োজন রয়েছে। তাতে আমাদের দেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির যে বৈচিত্র তাও মেলে ধরার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়।
তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সরকার প্রদত্ত বৃত্তিসহ নানা সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণ করে নিজেদের যোগ্য নাগরিকরূপে গড়ে তোলা এবং দেশ পরিচলনার কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি চাই সঠিকভাবে লেখাপড়া শিখে তোমরা নিজেদের যোগ্যরূপে গড়ে তুলে রাষ্ট্র পরিচালনায় এগিয়ে আসবে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তোমরা অবদান রাখবে। পাশাপাশি নিজস্ব স্বকীয়তাটাও তোমরা বজায় রাখবে। শেখ হাসিনা পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনে বাংলার জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাইÑআবার তারা ভোট দিয়ে আমাদেরকে সরকার গঠন করে দেশসেবার সুযোগ দিয়েছে। উল্লেখ্য, সমতলের ৫৫টি জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে, ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার কর্মসূচীটি বন্ধ করে দেয় এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে এটি চালু করে এবং তা অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এ কর্মসূচীর আওতায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫শ’ বৃহৎ আকারের আয়বর্ধনমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।