দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের রাজনীতি প্রধান দুই প্রতিপক্ষ শিবিরে বিভক্ত এবং পরস্পরের অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, একে অন্যের মুখ দেখবে না কিংবা ছায়াও মাড়াবে না—এমন প্রতিজ্ঞাই কাজ করছে। ফলে অতীতে সংঘাত, প্রাণহানি কিংবা পরিকল্পিত সন্ত্রাসের ঘটনাও কম ঘটেনি। এসবের ফলে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে। এ সময়েও আগের মতো শত্রুতা, অসহিষ্ণুতা কিংবা সংঘাতের রাজনীতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর সেই অনুভূতির কথাই বলেছেন। অগ্রগতির বর্তমান ধারাকে অব্যাহত রাখা এবং তাকে আরো বেগবান করার জন্য এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির ওপর তিনি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যদের সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সংখ্যায় কোন দলের কতজন সেটি বিবেচ্য হবে না, একজন সদস্যও যদি ন্যায্য সমালোচনা করেন কিংবা ন্যায্য কোনো দাবি তুলে ধরেন, গুরুত্বের সঙ্গেই সেটি বিবেচনা করা হবে।’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে বিরোধী দলগুলোর অনুকূল সাড়া দেওয়া উচিত।
বিগত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র আটটি আসন। নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ব্যাপক কারচুপি ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলে আবার নির্বাচন দেওয়ার দাবি করে আসছে। এই আটজন সংসদ সদস্য শপথও নেননি। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শপথ নেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটিও বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাহলে ফলাফল কী হবে? শপথ না নিলে এবং শপথের সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে এসব আসনে উপনির্বাচন হবে। সেখানে বিএনপি অংশ নেবে না, এমনটি ধরেই নেওয়া যায়। তার অর্থ আগামী পাঁচ বছরের জন্যও আমরা একটি একতরফা সংসদ পেতে যাচ্ছি? আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা আবার নির্বাচনের দাবিকে হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছেন। বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকও আবার নির্বাচনের বাস্তবতা খুঁজে পাচ্ছেন না। তা ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের ব্যাপারে শুধু দেশেই নয়, লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারসহ বিশ্বের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানই পূর্বাভাস দিয়ে আসছিল। কাজেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আবার নির্বাচনের দাবি আদায় করাও খুব একটা সহজ হবে বলে মনে হয় না।
দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাকে অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলেই মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, সংখ্যায় কম হলেও বিএনপির সংসদে যাওয়া উচিত এবং প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহ্বানকে সম্মান জানানো উচিত। আমরাও মনে করি, বিএনপি সময়োপযোগী এবং কাম্য সিদ্ধান্তই নেবে।