পণ্যের তুলনায় সেবা রফতানি বাড়ছে বেশি হারে। রফতানিখাতে প্রায়ই যুক্ত হচ্ছে নতুন সেবা। বাংলাদেশ রফতানি বাণিজ্য খাতে নতুন দিগন্তেরই উন্মোচন করেছে। এক দশক আগেও যা ছিল অভাবনীয়, অকল্পনীয়, শেখ হাসিনা সরকারের দক্ষতা ও দূরদর্শিতার কল্যাণে এ খাত নতুনত্বের সন্ধান দিয়েছে। চলতি অর্থ বছরের (২০১৮-১৯) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথা প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের সেবা রফতানি বেড়েছে রেকর্ড ৫৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে রফতানি বেশি হয়েছে ১৩ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে প্রায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার। যা পূর্ববর্তী অর্থ বছরের (২০১৭-১৮) একই সময়ের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে আয় হয়েছিল ৯০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের সেবাখাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৫ কোটি ডলার। যার বিপরীতে আয় হয়েছিল ১৪০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। সেবা রফতানির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন সেবা, পর্যটন, ব্যাংক-বীমা, টেলিযোগাযোগ সেবা। এ তালিকায় নির্মাণ, কম্পিউটার ও তথ্য সেবা, মেধাস্বত্ব ইত্যাদিও রয়েছে। বছরের কম বেশি চার শ’ কোটি ডলারের বেশি আয় আসছে এখন সেবা রফতানি থেকে। মোট রফতানি আয়ে সেবার অংশ দশ শতাংশের মতো। পণ্যের মতো সেবা রফতানিও অনেক সম্ভাবনাময়। তবে সেবা রফতানিতে মানের উন্নয়ন খুব বেশি জরুরী। এটা আসলে জ্ঞাননির্ভর বিষয়। সেবা রফতানিতে বাংলাদেশ এখনও খুব সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পেরেছে তা বলা যাচ্ছে না। দেশের চিকিৎসা সেবা উন্নত হলে এ দেশে সেবা নিতে আসত বিদেশীরা। এতে সেবা রফতানি বাড়ত। এখন হচ্ছে তার উল্টো। দেশের লোক বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে। শিক্ষাসহ অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে সেবা রফতানিতে খুব বেশি কিছু করার নেই। ব্যবসায়িক স্বার্থে বেসরকারী খাতকেই এ বিষয়ে এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। যদি হয় তাহলে সেবা রফতানি অনেকদূর এগিয়ে যাবে। চলতি অর্থবছরে পরিবহনখাতে প্রথম এই তিন মাস রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। যার বিপরীতে আয় হয়েছে ১৯ কোটি এক লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয় এক দশমিক তিন শতাংশ। নির্মাণ সেবা খাতে একই সময় রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তিন কোটি ৮৭ লাখ ডলার। আয় হয় নয় কোটি ২৬ লাখ ডলার। আয় বেশি হয় ১৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ভ্রমণ সেবা খাত থেকে অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ৬২ লাখ ডলার। যার বিপরীতে আয় হয় আট কোটি ১৬ লাখ ডলার। আয় কম হয়েছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি সেবা রফতানি হয়েছে টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি সেবাখাতে। এ খাতে প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। আয় হয় ১৪ কোটি ৯২ লাখ ডলার। আয় বেশি হয় ১৩ দশমিক দুই শতাংশ। আকাশ পরিবহন থেকে আয় হয়েছে সাড়ে চার কোটি ডলার। আগের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০৭ শতাংশ। সমুদ্র পরিবহন সেবা রফতানি বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ। আয় এসেছে ৪ কোটি ডলারের কিছু বেশি। পর্যটন সেবা রফতানি থেকে আয় এসেছে পাঁচ কোটি ডলারের মতো। সেবা খাতগুলোকে আরও বেশি উন্নত করা গেলে রফতানি আয় বাড়বে। কর্তৃপক্ষ যদি এই খাতের বিষয়ে আরও সুদৃষ্টি প্রদান করে তবে আয়ের পরিমাণ বাড়তে বাধ্য।