পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ জরুরী

55

নানাবিধ কারণে আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল থাকে। কোনো কিছুই কাম্য দরে পাওয়া যায় না। পথে-ঘাটে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেটের মজুদদারি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজার পরিবীক্ষণে উদাসীনতা, বিক্রেতাদের মুনাফাবাজি প্রভৃতি এর জন্য দায়ী। যেসব নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার যুক্তি দেখানো হয়। অস্থিরতা থাকলে তো কথাই নেই, অস্থিরতা না থাকলেও এ যুক্তি দেখানো হয়। এসবের ফল ভোগ করতে হয় ক্রেতাদের। অনেক দিন ধরে এ প্রবণতা চলছে। গত বছরও বাজার সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর স্থিতিশীল ছিল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক বিবরণীতে বলা হয়েছে, বিগত বছরে চাল, গম, চিনি, ভোজ্য তেল প্রভৃতি পণ্যের দাম নিম্নমুখী ছিল। ফলে সার্বিক বিবেচনায় আন্তর্জাতিক বাজারদর ভোক্তার নাগালে ছিল। সংস্থাটির হিসাবে গত বছর খাদ্যপণ্যের দাম ৮.৫ শতাংশ কমেছে। সারা বছরের হিসাবে চিনির দাম কমেছে ১৭.৬০ শতাংশ। গমের দাম বেড়েছে ১৯.৫৪ শতাংশ। চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। এক বছরে চালের দাম কমেছে ১০.৬০ শতাংশ।
এফএওর বিবরণী অনুযায়ী বিগত বছরের পুরো সময় ধরেই ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর নিম্নমুখী ছিল। নভেম্বরে দাম কমেছে ৫.৭ শতাংশ। টানা ১০ মাস ধরে এ বাজার নিম্নমুখী রয়েছে। সয়াবিনের দাম কমেছে ৭.৮৪ শতাংশ। আর পাম অয়েলের দাম কমেছে ১৮.৪৭ শতাংশ। চলতি সপ্তাহেই দাম কমেছে ৫.৭০ শতাংশ। গত বছর টানা ছয় মাস দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বরে দাম কমেছে ৩.৩ শতাংশ। সার্বিকভাবে দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে ১৩.৯ শতাংশ।
আরো কিছু পণ্যের বাজারদরের হিসাব দিয়েছে এফএও। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ থাকার কারণে বছরের শেষে সোনার দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়। তবে বছরের সার্বিক হিসাবে দাম কমেছে ১.৪৩ শতাংশ। রুপার দামও কমেছে ৯.৯৯ শতাংশ। নতুন বছরে দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে টানা তিন বছর নিম্নমুখী থাকার পর ২০১৭ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ২০১৮ সালের শুরুতেও তা অব্যাহত ছিল। বাণিজ্য যুদ্ধকেন্দ্রিক বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণে বছরের শেষের দিকে তেলের দাম আবার কমতে থাকে।
নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারের এ খবর সাধারণ ভোক্তাদের ক্ষণিক স্বস্তি দেবে বটে কিন্তু তা স্থায়ী হবে না নিজস্ব বাজার পরিস্থিতির কারণে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার যুক্তি খুব ভালোভাবে কাজে লাগানো হয়। কিন্তু দাম কমার যুক্তি আমলে নেওয়া হয় খুবই কম। আশা করব, বিশ্বজাজারের স্থিতিশীলতার ইতিবাচক প্রভাব যাতে নিজস্ব বাজারে খাটানো যায়, সে চেষ্টা বাজার ও মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো করবে।