সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে আসা বিএনপি ও ধানের শীষের প্রার্থীরা পেয়েছেন আটটি আসন। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গড়তে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা হবেন চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী।
গত এক দশকে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সামনে এখন নতুন এক চ্যালেঞ্জ। ২০০৮ সালে তিনি যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচের কাছাকাছি। ২০১৮ সালে এসে সেই প্রবৃদ্ধি আট ছুঁই ছুঁই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০-এর ঘরে নিতে চান তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রকাশিত ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহারের শুরুতেই ২১ বিশেষ অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে। এ অঙ্গীকারগুলো হলো প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরসুবিধা সম্প্রসারণ; তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর; কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; দারিদ্র্য নির্মূল; সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা; ব্লু-ইকোনমি, সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।
বাংলাদেশের মানুষ নতুন এক প্রত্যাশায় শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছে। কাজেই তাঁর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা। মানুষ চায় দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হোক। সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হোক সমাজ। সেই সঙ্গে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এই শক্তিকে কাজে লাগানো গেলে এ দেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। তবে সবার আগে দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে গণতন্ত্রচর্চা বাড়াতে হবে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।