কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে না পারায় নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছে। এটা তাদের দোষেই হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি-সন্ত্রাস তাদের ভরাডুবির কারণ। জনগণ উন্নয়নের সুফল পেয়ে ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখেই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে তাদের জবাব দিয়েছে।
সোমবার গণভবনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ৩০ দেশের পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনটা খুবই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এর আগে কখনও এতটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। আমাদের জনগণ অবাধে ও ভীতিহীনভাবে ভোট দিতে পেরেছে। আর নির্বাচনে কোনও অনিয়ম হলে নির্বাচন কমিশন বন্ধ করে দিত।
মতবিনিয়মকালে তার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. গওহর রিজভী, জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ এ আরাফাত।
সভায় বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা বিএনপির সাতটি আসন পাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নের উত্তরের পাশাপাশি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় ও বিএনপি-জামায়াত জোটের শোচনীয় পরাজয়ের কারণগুলোও তুলে ধরেন তিনি।
বিরোধীদের নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হই তখন সকল মানুষেরই প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে সুরক্ষা দেয়া আমার দায়িত্ব।
বিএনপির পরাজয়ের কারণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছে তাদের নিজেদের কারণে। নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের প্রধান কে হবে তা তারা দেখাতে পারেনি। আর আইনজীবী হিসেবে ড. কামাল হোসেন খুবই ভাল। কিন্তু তিনি যখন তার দল গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকেই তাঁর নির্বাচন পরিচালনা করার ভাল অভিজ্ঞতা নেই, জেতারও কোন অভিজ্ঞতা নেই।
নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিএনপি আমলে দুর্নীতির কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, বিএনপি আমলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ইত্যাদির কারণে মানুষ তাদের রিজেক্ট (প্রত্যাখ্যান) করেছে। আর আমরা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছি- তারা (বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচনী কোন কাজ করেনি। কয়েকজনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও অনেকেই এ্যাক্টিভিটি না করে প্রোপাগান্ডা ছাড়া সেরকম কিছু করেনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিএনপি তাদের জোটে মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে, এজন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর বিএনপির মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে অভিযুক্ত। তাদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ অভিযোগ প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশে করে প্রধানন্ত্রী বলেন, ভোটে কোন কারচুপি হয়নি। ভোটে কারচুপি হলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বন্ধ করে দিত। ভোটের সময় মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অগণিত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। আমার তো মনে হয় অনেক ব্যবহার করলে ইন্টারনেট এমনিতেই স্লো হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জন্য রাজনীতি করলে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। আজকের পরাজিতরা যদি জনগণের জন্য রাজনীতি করে তাহলে তারাও আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আমি সবাইকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। আলোচনা করেছি। তাদের দাবি শুনেছি। যাতে করে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি।
নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগ তদন্ত করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংসদে সক্রিয় বিরোধী দল না থাকায় আপনি কি চিন্তিত?
নির্বাচনে বিএনপির কম আসন পাওয়ার বিষয়ে উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। যারা নির্বাচনে পাস করার মতো প্রার্থী তাদের মনোনয়ন না দিয়ে টাকা নিয়ে অন্যদের মনোনয়ন দিয়েছে।
‘আপনার এ বিপুল বিজয়ের পেছনের ম্যাজিকটা কী?’ বিদেশী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ম্যাজিক কিছুই না। দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে সেজন্য কাজ করেছি।