কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানত নাশকতার মামলায় পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের মুখে ভোটের প্রচার চালাতে কর্মী সংকটে পড়া বিএনপি ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া নিয়ে সংশয়ে। ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের দুই লাখেরও বেশি ভোটকক্ষে কজন করে প্রতিনিধি রাখা চ্যালেঞ্জের হবে বলেই ধারণা করছে দলটি।
পুলিশ গ্রেফতার করে কি না, এটাই সংশয়ের কারণ। চলতি বছর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এজেন্ট দেওয়া নিয়ে হিমশিম খেয়েছে দলটি।
বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এজেন্ট বা সক্রিয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হতে পারে এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে তারা আগেই বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছেন। প্রত্যেক বুথের বিপরীতে একাধিক এজেন্ট ঠিক করে রাখা হয়েছে।
যদিও সব আসনে এমনটি সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। ফলে শেষ পর্যন্ত এজেন্ট সংকট থেকেই যাবে বলে আশঙ্কা দলটির শীর্ষ নেতাদেরও।
রাজশাহীর বিএনপির নেতা ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘রাজশাহীর অন্য আসনের কথা বলতে পারছি না। তবে সদর আসনে এজেন্ট নিয়ে সমস্যা হবে না। কারণ, আমাদের বিকল্প তৈরি করা আছে।’
গতকাল দুপুরে তালিকাভুক্ত পাঁচজন এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে বুলবুল বলেন, ‘আমরা জানতাম এমনটাই হবে। যে কারণে তিন ধাপে এজেন্ট রাখা আছে।’
তবে রাজশাহী-৪ আসনের এজেন্ট দেওয়া নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার মোট ভোটকেন্দ্র ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৮৫৯টি এবং নারী ভোটকক্ষ ১ লাখ ৮ হাজার ৬৮১টি। তবে যে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সেগুলোতে ভোটকক্ষের সংখ্যা কিছুটা বাড়বে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সব কটি বুথে এজেন্ট দেওয়া সম্ভব কি না, এ নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট দেওয়াটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ। তালিকা ধরে ধরে গ্রেফতার, না হয় থ্রেট করা হচ্ছে পরিবার-পরিজনকে, যাতে এজেন্টরা কেন্দ্রে না যায়।’
তাহলে বিএনপি কী করবে? এমন প্রশ্নে আযম বলেন, ‘দেখা যাক। কঠিন অবস্থার মধ্যেই আমরা আশাবাদী। কারণ, জনগণ আমাদের সঙ্গে।’
বৃহস্পতিবার ঢাকা-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘নির্বাচনের দিন পোলিং এজেন্টও থাকবে কি না সন্দেহ আছে। কারণ, যেভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে, যাদের গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে বহু লোক আছে, যারা আমাদের পোলিং এজেন্ট হতো।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্ট নির্বাচন ও তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে সাহসী, জনপ্রিয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবশালী বিএনপির সমর্থকদের। দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মী ছাড়াও যারা প্রতিকূল পরিবেশেও কেন্দ্রে অবস্থান করে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন, তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে এজেন্ট হিসেবে।
নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি অনুুযায়ী করণীয় নিয়েও এজেন্টদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণকালে।
পুলিশি হয়রানির মুখে পোলিং এজেন্ট দেওয়া নিয়ে সমস্যার কথা বলছেন বরিশাল বিভাগের দায়িত্বশীল নেতারা। বিভাগের ছয় জেলার ২১টি আসনের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল-৫ আসনের মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বৃহত্তর বরিশালে যদি লাগে এক লাখ এজেন্ট দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো পুলিশি গ্রেফতার। এটা বন্ধ হলে আশা করি, এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
বরিশাল বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘এত দিন প্রচারে বাধা দিয়েছে। এখন এজেন্টদের খুঁজে খুঁজে গ্রেপ্তার, না হয় হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। তবে আমাদের একাধিক এজেন্ট তালিকা আছে। আশা করি, খুব সমস্যা হবে না। কিন্তু সব আসনে এমনটা সম্ভব না-ও হতে পারে।’
একই ধরনের সমস্যার কথা বলছেন সিলেটের ১৯টি আসনের বিএনপির প্রার্থীরা। তালিকায় নাম লেখাতেও অনীহা প্রকাশ করছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ‘বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পোলিং এজেন্টের অভাব নেই। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ঘোলাটে যে নেতাকর্মীরা অনেকে ইচ্ছা থাকার পরও সামনে আসতে চায় না। আবার পোলিং এজেন্ট যাদের করা হয়েছে, তারাও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’