কমলগঞ্জে ঋণের তাড়নায় কৃষকরা দিশেহারা

93
ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই ধান কাটছে কৃষক।

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মাঠে মাঠে কৃষকদের দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী ফসলে প্রকৃতির নিয়মেই নবান্ন সমাগত। নবান্নের আমেজে কৃষকরা হয়ে উঠছেন উৎফুল্ল। নানা দুর্যোগ পেরিয়ে মাঠে মাঠে সোনালী ফসল কৃষকদের ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনার যোগান দিয়েছে। নবান্নের শুরুতে কৃষি অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু সোনালী ফসলে ভরপুর। কিন্তু ব্যাপক উৎসাহ,উদ্দীপনা নিয়ে ধান কাটা শুরু করলেও সংশয়ের মধ্যে দিনযাপন করছেন কৃষকরা। ফসল ভালো হলেও বাজার দর কম হওয়ার কারণে পুঁজি উঠানো নিয়ে শংকায় রয়েছেন তাঁরা। ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক টাকা ধারদেনা করে এখন ফসল বিক্রি করে ঠিক মত সেই টাকা পরিশোধ করতে পারবেন কিনা সেই চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
আলাপকালে কমলগঞ্জের কৃষক কাজল মালাকার জানান, “এবার খেতো ভালা ধান হইছে। কিন্তু কিতা যে কইতাম বাজারও ধানর দাম একেকবারে কম। ধানর মণ ৪০০ তাকি ৪৫০ টাকা করি চলের। ধান ভালা ওয়ায় মনও করছিলাম যে টাকা মাইনষর কাছ থাকি ধার করি আনছিলাম এগুন ভালা করি দিয়া সংসারওর লাগি কিছু রাখতাম পারমু,কিন্তু ওখন চিন্তাত পরিগেছি কেমনে যে কিতা করতাম। ভালা ধান পাইয়াও ধানর দামর লাগি ওখন বেশি চিন্তাত আছি। গতবারকু আমরা ৮০০ তাকি ৮৫০ টাকা করি ধান বেচছি কিন্তু এবারকু ধানর দাম ওত কম”।
এ বিষয়ে যুদ্ধাপুর গ্রামের কৃষক মনির মিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “এবাররেবা খেতর জেগাত বেতালা ধান ওইছে। আমার নিজর ১ কিয়ার জেগা, আর বাগি আরও ২ কিয়ার জেগাত ধান ফলাইছি। সব খেতো ভালা ধান পাইমু। কিন্তু দুঃখর কথা কিতা মাততাম বাজারও গেছলাম কালকু, গিয়া দেখি ধানর দাম একেকবারে নামাইল। যে টেকা বিচরাত খরচ করছি ধান বেচিয়াত ও টেকাই বার করতাম পারতাম নায়। ওখন বড় পেরেসানিত পরছি মাজনওর কাছ তাকি ধারে টেকা আনছিলাম কিছু, কইছলাম ধান বেচিয়া দিমু। কিন্তু ওখন যে অবস্থা আমার কথা বাদ দিলাম, মাজনওর পাওনা টেকা দেওয়াই ফাটাফাটি লাগছে।”
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় মোট ১৭ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃর্যোগের পরও ফসল ভালো হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বর্তমানে ধানের দাম গতবছর থেকে কম। তারা ধারণা করছেন ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে। কৃষকরাও উৎফুল্ল মনে নবান্ন উৎসব পালন করতে পারবেন বলে তারা আশাবাদি।
নবান্ন উৎসবের অংশ হিসাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসল তোলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধান কাটার চিত্র চোখে পড়ে। এবার ফলন ভালো হলেও বাজার দর নিন্মমানের থাকায় কৃষকদের মুখে মলিন হাসি দেখা গেছে। তারা আশা করছেন এবারও গতবারের দামে ধান বিক্রি করতে পারবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা এ প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের সার্বিক নজরদারিতে এবছর ফসল ভালো হয়েছে এবং বাম্পার ফলনও হবে। ফসল নিয়ে কৃষকরা যথেষ্ট খুশি হলেও বাজার দর নিয়ে কিছুটা সংকায় রয়েছেন।¬ আমি আশাবাদি অচিরেই কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন।