নারী নির্যাতন রোধ করতে হবে

5

দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে নারীরা খুন, ধর্ষণ এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করছে।
সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণও আশাব্যঞ্জক। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারীদের জয়জয়কার। পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে নারী। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের নারী জাগরণ সাড়া ফেলেছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এসেছে। নারী উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্জন অনেক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় ও প্রশংসনীয়। সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে ও চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অবস্থান এখন অনেক দৃঢ়। এর পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না কেন? একুশ শতকের বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে, কূপমণ্ডূকতা থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারেনি।
ফলে মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে। বন্ধুর সঙ্গে সাইকেলে ওঠায় এক তরুণীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ অভিহিত করে মারধর ও নির্যাতন চালিয়েছেন এক ইউপি সদস্য ও তাঁর সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। তরুণীকে নির্যাতন করার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি জনসমক্ষে আসে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা মামলা করার পর পুলিশ চূড়ামনকাটি ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে আটক করেছে।
ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে? কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা? সমাজের এমন অধঃপতিত অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। অতীতে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলে, অপরাধীরা শাস্তি পেলে আজকে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিপীড়করা ব্যাপক ক্ষমতাধর। যশোরের ঘটনাটি তো তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাধর। ভুল রাজনৈতিক মূল্যবোধের কারণেই কি সামাজিক অবক্ষয় বেড়েছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাঁদের মতে, নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। যেসব মামলা হচ্ছে তার দ্রুত বিচার হতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা। ক্ষমতার বলয়ে থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানোর ওপর নজরদারি করতে হবে।
নারী নির্যাতনের ঘটনা থেমে নেই। মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার প্রভাব পড়ছে সমাজে। দুর্বৃত্তরা সমাজকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। এ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতাও বাড়াতে হবে। যশোরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা।