গত কয়েক বছর গ্যাস সংকট যেন ঢাকাবাসীর জন্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল, দুপুর বা রাতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে গৃহস্থালি কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। বন্ধ রাখতে হয়েছে অনেক ফিলিং স্টেশনও। আপাতত সেই দুর্ভোগ থাকছে না, এমনটি ধরে নেওয়া যায়। বুধবার থেকে রাজধানীতে আমদানি করা তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস ঢাকায় পৌঁছতে শুরু করেছে। প্রথম দফায় ঢাকায় দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে আগে থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। চট্টগ্রামে এলএনজি সাশ্রয় হলে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে।
আমাদের দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ খুব বেশি নয়। যে মজুদ আছে তা উত্তোলনের জন্য বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন। সোজা কথায়, চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কম। মজুদ শেষ হয়ে না গেলেও পর্যাপ্ত অনুসন্ধান হচ্ছে না বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত। আবার মূল ভূখণ্ডে বড় আকারের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও মনে করেন অনেকে। কিন্তু গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শুধু গৃহস্থালি কাজে নয়, শিল্পে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। আর সে কারণেই আমদানির দিকে দৃষ্টি দিতে হয়েছে। আমরা যদি বহির্বিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই জাপান, কোরিয়া, চীন, ভারত, তাইওয়ানসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এলএনজি আমদানি করে তাদের জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কাজেই বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করে ভুল করেনি। বরং সাশ্রয়ী ব্যবহার দেশের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে পারবে বলে আশা করা যায়। দেশের অর্থনীতি যখন দ্রুত বিকশিত হচ্ছে তখন গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়বে। সেই চাহিদা পূরণে এলএনজি ভূমিকা রাখবে।
শিল্পনির্ভর উন্নয়ন প্রতিযোগিতার বিশ্বে যেকোনো দেশের জন্যই জ্বালানি খাতের সমৃদ্ধি অনস্বীকার্য। বাংলাদেশেও এই খাতকে অস্বীকার করার বা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশের জ্বালানি খাতের সংকট কাটিয়ে উঠতে এলএনজি আমদানি ও সঞ্চালন লাইনে তা সরবরাহের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাকে সমর্থন করতে হবে। এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করাও জরুরি। বিশেষ করে সমুদ্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ধারণা করা হয়, ছোট হলেও অনেক মজুদ এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
সঞ্চালন লাইনে এলএনজি সরবরাহের মধ্য দিয়ে গ্যাস সংকট দূর হবে— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।