একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল ও জোট প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ার হতাশা থেকেই কর্মী-সমর্থকদের এই বিক্ষোভ। জোট শরিকদের সঙ্গে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের টানাপড়েনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো আসনে সমঝোতা হয়নি। কোনো কোনো আসনে একই দলের দুজনকে দেওয়া হয়েছে দলীয় মনোনয়ন। কোন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও কম নয়। একাধিক এলাকায় বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করেছে। প্রার্থী বদলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিলও হয়েছে। আবার বিপরীত চিত্রও দেখা যাচ্ছে অনেক এলাকায়। পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর এলাকায় মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। কোথাও কোথাও ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে প্রার্থীকে। মোটর শোভাযাত্রার খবরও পাওয়া গেছে। মঙ্গলবারের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, হবিগঞ্জ-১ আসনে পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টির একাংশের নেতাকর্মীরা ঝাড়ু মিছিল করেছে। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক। ফরিদপুর-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। অন্যদিকে ঝালকাঠি-১ আসনের বর্তমান এমপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। নরসিংদী-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। একই ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-২ আসনেও। ময়মনসিংহ-৮ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপিকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তাঁর কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। আবার চাঁদপুর-১ আসনে দুজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে।
মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সব অংশীজনের। সবাই চাইলে নির্বাচনের আগে ও পরে পরিবেশ শান্ত থাকবে। কিন্তু দলের অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে। একইভাবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও কোনো সংঘাতে জড়ানো যাবে না। এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা যেতে হবে তৃণমূলে। এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক যুগসন্ধিক্ষণে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরো সুসংহত করার দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীল আচরণ করলে নির্বাচন কমিশন তথা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে। আমরা আশা করব, এবারের নির্বাচনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। কোথাও আচরণবিধি ভঙ্গ করা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। নিজেদের নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করবে কঠোরভাবে।