বাংলাদেশে যেকোনো নির্বাচনই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এলাকায় প্রার্থীদের জনসংযোগ, কর্মী-সমর্থকদের নানামুখী প্রচার-প্রচারণায় মুখর থাকে নির্বাচনী এলাকাগুলো। পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা নির্বাচনী অফিসে বাজে গানের সিডি। মিছিল-স্লোগানে মুখর হয় এলাকা। আবার এই নির্বাচন ঘিরে এক শ্রেণির অপরাধীচক্রও সক্রিয় হয়ে ওঠে। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহারও নতুন কিছু নয়। আত্মগোপনে থাকা অপরাধীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করে। কোনো কোনো এলাকায় সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। খুব সামান্য কারণে একপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হতে হয় প্রতিপক্ষকে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই কিশোর নিহত হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় তার নমুনা দেখা গেছে। বিএনপি অফিসের সামনে তুচ্ছ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের গাড়ি। এসব সংঘাতের ঘটনায় সাধারণত প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। যেমন নয়াপল্টনের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে দায় চাপানো হয়েছে পুলিশের ওপর।
নির্বাচন সামনে রেখে এই দুটি ঘটনার মধ্য দিয়েই সংঘাত-সংঘর্ষের অবসান হবে—এমন নিশ্চয়তা একেবারেই দেওয়া যায় না। বরং বলা যেতে পারে এটা সূচনা মাত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে। গত পাঁচ বছর সংসদেরও বাইরে রয়েছে দলটি। ফলে দলটির কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি প্রার্থীরাও এবার ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন মরিয়া হয়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যেও প্রবল আশাবাদ জন্ম নিয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের আশঙ্কা, নির্বাচনের মাঠে প্রভাব বজায় রাখতে সব দলই নিজেদের শক্তির মহড়া দিতে পারে। এই সুযোগে নতুন করে মাঠে নামতে পারে পেশিশক্তি ও অপরাধীচক্র। একই সঙ্গে উপেক্ষা করা যায় না উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের আশঙ্কাও। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের আগে-পরে বড় ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা দানা বাঁধছে জনমনে। যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর আঘাত করা হয়েছিল। সেই একই আশঙ্কা এবারও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে যেসব ঘটনা ঘটে, তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলে।
অতীতের ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের ইতোকর্তব্য স্থির করবে বলে আমরা আশা করি। আসন্ন নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হোক এটাই সবার চাওয়া। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পলাতক দাগি আসামিরা যাতে এলাকায় ফিরতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে সঠিক নির্দেশনাও আগে থেকে দিতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এখন থেকেই সমন্বিত অভিযান চালানো প্রয়োজন।