নির্বাচনী মাঠ জমজমাট

167

মৃদুমন্দ নয়, ভোটের হাওয়া বেশ জোরেই বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দর-কষাকষি, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঘর গোছানোর আয়োজন ও ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। ভোট সামনে রেখে গড়ে ওঠা জোটগুলো শরিকদের সঙ্গে কিভাবে আসন ভাগাভাগি করবে, কোন দল থেকে কোন প্রার্থী বিরোধী শিবিরে যোগ দিতে পারে, কোথায় কোন পরিস্থিতি প্রভাব ফেলবে ভোটের বাক্সে, কোন এলাকায় কার প্রভাব বেশি এসব নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে। সব মিলিয়ে দেশ এখন নির্বাচনমুখী।
নানা কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এবার ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে থাকছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। নেতৃত্বে একসময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেন। অন্যদিকে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। রাজনীতির এই নতুন মেরুকরণও পর্যবেক্ষকদের আগ্রহের বিষয়। ড. কামাল হোসেন একসময় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানপ্রণেতাদের একজন। ড. কামাল হোসেন তাঁর ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত করেছেন বিএনপিকে, যে দলটি আবার ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক। এই ২০ দলীয় জোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক জামায়াত। একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালতের নির্দেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াত নেতারা বিএনপি প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামছেন। ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন যাঁরা পাবেন তাঁরাও একই প্রতীকে প্রার্থী হবেন। জামায়াত ও ড. কামালের ঐক্যফ্রন্ট কী করে একই প্রতীকে ভোটযুদ্ধে নামে, এটাও এখন বড় আলোচনার বিষয়। যুক্তফ্রন্টের ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। তাঁর জোট এবার ভোটে নামছে নৌকা প্রতীকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেদিকেও সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ। ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন এক সমাবেশে বলেছেন, একবার নির্বাচন বয়কট করে ভুগতে হয়েছে, তাই কোনো অবস্থায়ই এবার নির্বাচন বয়কট করবেন না তাঁরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। নির্বাচন কমিশন বলছে, এবার একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায় তারা। নির্বাচন সামনে রেখে এমন আরো অনেক সমীকরণ নিয়ে যেমন ভোটারদের ভাবতে হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও তীক্ষদৃষ্টি রয়েছে এসব বিষয়ে। এবারের নির্বাচনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বড় দুই দলে তারকাদের উপস্থিতি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বড় দুই জোটের প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেশের গ্ল্যামারজগৎ ও খেলার মাঠের অনেক তারকা। তাঁদের তারকাখ্যাতি দলের জন্য কী ফল বয়ে আনে সেটাও এবার দেখার বিষয়।
সব মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠ এখন জমজমাট। আচরণবিধি মেনে চললে এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করা যায়।