নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) আন্দোলন করায় বন্ধ হয়ে গেছে দেশের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলার ২০৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে এ জেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অসহায় মানুষগুলো। চিকিৎসাসেবা ও ঔষধ নিতে এসে ক্লিনিকে তালাবদ্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে গর্ভবতী মায়ের সেবা, শিশু স্বাস্থ্য, নরমাল ডেলিভারি, সাধারণ রোগের চিকিৎসা, গর্ভবর্তী নারী ও শিশুদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন হেলথ সেবা, দৈনিক ও মাসিক রিপোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা সহ আরো অনেক স্বাস্থ্য সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (৯ফেব্রুয়ারি) জেলার কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, কোন ক্লিনিক তালা বদ্ধ অবস্থায় আবার কোন কোন ক্লিনিক খোলা থাকলেও সহকারী স্বাস্থ্য কর্মীরা বসে আছে এবং কাউকেই ঔষধ দিতে পারছে না বলে সেবা নিতে আসা অসহায় রোগীরা সেবা ও ঔষধ না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। তেমনি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আব্বাসের স্ত্রী কলসুমা ও মেয়ে দেড় বছর বয়সী শিশু বাচ্চাকে নিয়ে আসেন ফেকুলমাহমুদপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে এবং সাথে ছিলেন আর দুইজন অসহায় বৃদ্ধ মহিলা। কিন্তু সেবা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। এমনই চিত্র দেখা যায় উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের খুজাঁরগাও কমিউনিটি ক্লিনিক, সাচনাবাজার ইউনিয়নের ভরতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে, জগনাথপুর উপজেলার কলকলি ইউনিয়নের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে,সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জগন্নাপপুর কমিউনিটি ক্লিনিক,দিরাই উপজেলার খাইমা কমিউনিটি ক্লিনিক,সহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ২০৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা বন্ধ রেেয়ছ।
গত ২০ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশের মত সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার কর্মরত কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি করেছে গত ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি। ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতি ও ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের দাবী না মানায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি চলতে দেশের প্রায় সব ক’টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে। চলমান আন্দোলনের কারণে সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার ২০৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মোঃ তানজিল মিয়া জানান, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিক হলো বর্তমান সরকারের চিন্তা প্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম। এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয় যার বাস্তাবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮-২০০১ সালের মধ্যে এক হাজারের অধিক কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ পূর্বক প্রায় আট হাজার চালু করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৬ বছর মেয়াদে এসব ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার কথা মাথায় রেখে ২০১৩ সালে চাকরি রাজস্ব খাতে অর্ন্তভূক্ত করণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এখনো সে উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। সেই সাথে ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে দেশের ১৪ হাজার সিএইচসিপি নিয়োগ পায়। এরমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন সিএইচসিপি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং ৫২ শতাংশ নারী সিএইচসিপিগণ শুরু থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলো। পরবর্তীতে দাবি পূরণ না হওয়ায় সিএইচসিপিরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রায় প্রদান করলেও এখনো সরকার বাস্তবায়ন করেনি। তাই এক দফা এক দাবি- চাকরি জাতীয়করণের লক্ষ্যে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন পালন করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।