কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাউশিসব শর্ত পূরণ করেও এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে-অর্ডার) না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের। এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, মাউশির কর্মকর্তা এবং মাউশির আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ২০০৪ সালের ৫ এপ্রিল চাকরি শুরু করেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এস এম নাজমুল আলম। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি সন্তুষ্ট না হওয়ায় দুই বছরের মাথায় চাকরিচ্যুত হন তিনি। অবশেষে মামলা করে ২০১৩ সালে চাকরি ফেরত পেলেও ম্যানেজিং কমিটি ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কয়েকজন কর্মকর্তার চক্করে পড়ে এমপিওভুক্তি আজও হয়নি তার। ফলে বিনা বেতনেই ১৪ বছর চাকরি করছেন স্কুলটিতে।
অন্যদিকে একইভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েও এমপিওভুক্তির সুপারিশ বঞ্চিত হয়েছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হাসনা হেনা। প্রতিকার চেয়ে মাউশিতে আবেদন করলেও ১০ কর্মদিবসের তদন্ত আটকে রয়েছে আট মাসের বেশি সময় ধরে। এখন পর্যন্ত তার এমপিওভুক্তি হয়নি।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এস এম নাজমুল আলম বলেন, ‘আমার নিয়োগের পর পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবাই এমপিওভুক্ত হয়েছেন। আর আমি ১৪ বছর অপেক্ষা করেও এমপিওভুক্ত হইনি। আদালতের আদেশও মানেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ আমার এমপিওভুক্তির সুপারিশ করে প্রধান শিক্ষক মাউশিতে পাঠালেও পদ মুদ্রণ (পদ সৃষ্টি ও তা প্রকাশ) হতে হবে বলেছেন মাউশির সহকারী পরিচালক। তিনি জানিয়েছিলেন, দু-চার দিন সময় লাগবে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ঘোরাঘুরি করেও কোনও ফল পাইনি।’
আরেক এমপিওভুক্তির সুপারিশ বঞ্চিত শিক্ষক হাসনা বেগম বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার এমপিওভুক্তির সুপারিশ না করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া দুইজন শিক্ষকের তালিকা করে তাদের এমপিওভুক্তির সুপারিশ করে। ওই দুইজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মাউশির চক্করে আমি আটকে গেছি।’
জানা গেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের অনিয়মের বিষয়ে মাউশির পরিচালক বরাবর আবেদন জানান হাসনা হেনা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট মাউশির সহকারী পরিচালক (সেসিপ) মো. সবুজ আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তাকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ১০ কর্মদিবসের তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। শুধু নাজমুল আলম আর হাসনা হেনা নন, তাদের মতো আরও অনেকেই এমন চক্করে পড়ে বিনা বেতনে চাকরি করছেন বছরের পর বছর।
কুড়িগ্রাম জেলার মিজানুর রহমান নামের একজন শিক্ষক কাছে অভিযোগ করেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশিতে ঘুরে ঘুরে সর্বশেষ গত মাসে আমি এমপিওভুক্ত হয়েছি।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সব ডকুমেন্ট নিয়ে অনলাইনে ফাইল পাঠিয়েছিলাম জেলা অফিসে। জেলা অফিস ওই ফাইল ফরোয়ার্ড করে উপ-পরিচালকের অফিসে। কিন্তু আমার ফাইলে কোনও ডকুমেন্ট অ্যাটাচ (সংযুক্ত) ছিল না। আর এ কারণে এতদিন আমার এমপিওভুক্তি হয়নি। আমি আবেদন করার পর তিন দফায় এমপিওভুক্ত হয়েছে শিক্ষকদের। কিন্তু আমারটা আটকে ছিল। সর্বশেষ গত মাসে এমপিওভুক্ত হয়েছি আমি।’
মাউশির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস ও মাউশির কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে গত মে মাসের এমপিওভুক্ত থেকে বঞ্চিত হন রংপুরের এক হাজার ১৫০, ঢাকার ৫৭১ জন ও ময়মনসিংহের ২৭৩ জন শিক্ষক। মার্চ মাসেও এসব শিক্ষক বঞ্চিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ গত মাসে এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা কয়েক দফা আবেদন করেছেন। প্রাপ্যতা থাকলেও তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো. মোস্তাক হাবিব এমপিওভুক্তির কাজে উদাসীনতা দেখিয়েছেন দফায় দফায়। তার উদাসীনতার কারণে গত মার্চ মাসে দুই হাজারের বেশি শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। পরে গত মে মাসেও এমপিওভুক্ত নিয়ে দুর্নীতি ও উদাসীনতার অভিযোগ উঠলে গত ২৮ মে মাউশিতে অনুষ্ঠিত এমপিও সংক্রান্ত বৈঠকে রংপুর ও ঢাকাসহ তিনটি অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালককে ভর্ৎসনা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রাপ্যতা থাকা সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে উদাসীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ এমপিওভুক্তির যোগ্য হলে তার এমপিওভুক্ত যাতে আটকে না থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’