শ্রেষ্ঠ ৩৫ করদাতাকে সম্মাননা দিলো সিলেট কর অঞ্চল। সোমবার সকালে নগরীর রিকাবিবাজার মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘ মেয়াদী করদাতাদের সম্মাননা প্রদান আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (ট্যাক্সেস এন্ড এনফোর্সমেন্ট) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে গেলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অর্জন করায় মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তেমনী ট্যাক্স দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করায় সর্বোচ্চ করদাতাদের এ যুগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ট্যাক্স বিভাগও এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৩৩ বছরে দেশে ট্যাক্স সংগ্রহ বেড়েছে ২৬ গুণ। ইটিআইএনধারী ২১ লাখ থেকে হয়েছেন ৩৭ লাখ।
তিনি আরো বলেন, জাতির উন্নয়নের জন্য প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে। প্রতি বছর ৩/৪ লাখ বেড়েছে। আর এভাবে করদাতা বাড়লে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে সময় লাগবে না। তাছাড়া আগের চেয়ে কর প্রদান প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। যে কারণে করদাতা সংখ্যাও বাড়ছে। তাছাড়া করদাতাদের জন্য বিশেষ সুবিধা চালু করলে ইটিআইএনধারী আরো বাড়বে।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেটের কর কমিশনার আবু হান্নান দেলওয়ার হোসেন বলেন, কর বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে করদাতাদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ এবং জাতীয় রাজস্ব আহরণে কর অঞ্চল সিলেট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সেরা করদাতাগণ নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. সোহরাওয়ার্দী, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যোট কমিশনারেট গোলাম মো. মুনির, সিলেট মেট্টোপলিটন চেম্বারের সভাপতি হাসিন আহমদ, সিলেট চেম্বার পরিচালক হিজকিল গুলজার, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন সেলিম, ইউমেন্স চেম্বার সভাপতি স্বর্ণলতা রায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগ্ম কর কমিশনার সাহেদ আহমেদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন, উপ কর কমিশনার (প্রশাসন) কাজল সিংহ, আনোয়ার সাদাত, বাপন চন্দ্র দাস, সাদ উল্লাহ, আবু সাঈদ, অতিরিক্ত সহকারি কর কমিশনার কামরুল হোসেন, আনিসুর রহমান, সহকারি কর কমিশনার আবু নাসের সিদ্দিকী, কর পরিদর্শক ফাতেমা বেগম, সামসুন্নাহার। এবার সিলেট কর অঞ্চলে ৪টি জেলায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় দীর্ঘ সময় কর প্রদানকারী ১০ জন করদাতা, সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ১৫ জন, সর্বোচ্চ নারী করদাতা ৫ জন এবং সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ৪০ বছরের নীচে ৫ জন তরুণ করদাতাকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ।
‘আয়করের প্রবৃদ্ধি, দেশ ও দশের সমৃদ্ধি‘ শ্লোগানে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও শুরু হচ্ছে আয়কর মেলা। এদিন সকাল ১০টায় নগরের রিকাবিবাজার মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য কর মেলার উদ্বোধন হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট কর অঞ্চল ২২টি সার্কেলে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে সিলেটে ১৩, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ৩টি কর অঞ্চল রয়েছে। এবার মেলায় ২৩ টি সার্ভিস ডেস্ক, ৩টি ইটিআইএন, রিটার্ন গ্রহণ, সঞ্চয়ী ব্যুরো, আইনজীবী, ব্যাংক বুথের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা প্রতিবন্দ্বী ও সাংবাদিকদের জন্য পৃথক বুথ করা হয়েছে মেলায়।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৮৫২ দশমিক ৯৮ কোটি লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে অর্থ বছর শুরু করে সিলেট কর অঞ্চল। অর্থ বছরে সিলেটে ১৮ হাজার নতুন ইটিআইএনধারী করার লক্ষ সিলেট কর অঞ্চলের। এরই মধ্যে নতুন করদাতা হয়েছেন ৬ হাজার। আগামি অক্টোবরের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৫ বছরের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৭-১৮ সালে ৭২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫১৯ দশমিক ১৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। এরআগে ২০১৬-১৭ সালে ৫০০ কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫১৫ দশমিক ২৮ কোটি টাকা আদায় হয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৪৪০ কোটি লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে আদায় হয় ৩৮৩ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৩২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৫৯ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা।
এবার মেলা থেকে ৪৫ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মেলা শুরু করেছে সিলেট কর অঞ্চল। গত বছর মেলা থেকে দাখিলকৃত রিটার্ণের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৯৯। আর আদায় ছিল ৪১ কোটি টাকা। বিজ্ঞপ্তি