স্টাফ রিপোর্টার :
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মঙ্গলবার ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে দূর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এবার সিলেটে প্রায় ৬শ মন্ডপে দুর্গা পূজা নির্বিঘœ পালন করতে সিলেট মহানগর ও জেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পূজামন্ডপগুলোতে নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আনসার সদস্য এবং মন্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। আজ বুধবার মহাসপ্তমী বিহিত পূজা।
শাস্ত্র বলছে- সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন বুধবার এবং ফেরার দিন শনিবার হওয়ায় দুর্গা এবার আসছেন নৌকায় চড়ে, যাবেন ঘোড়ায়। দুর্গার নৌকায় চড়ে মর্ত্যে আসার অর্থ হল- ‘শস্যবৃদ্ধিস্থুথাজলম’। অর্থাৎ শস্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা। আর ঘোড়ায় চেপে দেবীর বিদায়ের মানে হল- ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। মানে- রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর শঙ্কা।
আগামী শনিবার বিজয়া দশমী পর্যন্ত ঢাকের বোল, মন্ত্র, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মুখরিত থাকবে পূজামন্ডপগুলো। পূজারি ও ভক্তরা উদ্বেলিত হবেন দেবী মহামায়ার অধিষ্ঠানে। সবাই শামিল হবেন পৃথিবীর সব আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় ও মানুষের কল্যাণ প্রতিষ্ঠার প্রার্থনায়। গত সোমবার ছিল দেবীর বোধন। কাল বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্ঠমী ও কুমারী পূজা, ২৯ সেপ্টেম্বর মহানবমী শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব।
পুলিশ ও পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলাতে এবারের মোট পূজার সংখ্যা ৫৭৬ টি। এর মধ্যে ৬০ টি পূজা ব্যক্তিগত। এছাড়া নগরীতে মোট ৬৪টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে ৪৭ টি মন্ডপে সার্বজনীন দুর্গা পূজা ও ব্যক্তিগত পূজা ১৭টি। এসব মন্ডপ ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বড় মন্ডপগুলোতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পূজা চলাকালীন যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতাও জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এবার নিরাপত্তায় পুলিশের মোটরসাইকেল দল প্রস্তুত থাকবে। যেকোনো স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই এরা ছুটে যাবে ঘটনাস্থলে।
সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পূজামন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,সনাতন ধর্মীয় পুরোহিতদের মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবীর আগমন ঘটছে নৌকায় চড়ে। দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। শ্বশুর বাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে তিনি বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসছেন। সঙ্গে আছেন চার সন্তান- বিদ্যার দেবী সরস্বতী, ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মী, সিদ্ধিদাতা গণেশ ও পৌরুষের প্রতীক কার্তিক। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন।