নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি সহ ঐক্যফ্রন্ট ॥ সংবাদ সম্মেলনে আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

45

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে কৌশলগত কারণে নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আজ রবিবার বেলা একটায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবিতে আজ নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ সময় তারা তফসিল পেছানোর পাশাপাশি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানাবেন। এ ছাড়া জোটগত ও দলগতভাবে কারা নির্বাচন করবেন তাও জানাবেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের বৈঠককালে শরিক দল জামায়াতের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় এ দলটি কিভাবে নির্বাচন করবে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনাকালে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় জামায়াতকে তারা ধানের শীষ দেবে না। এ পরিস্থিতিতে জামায়াত কিভাবে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত জামায়াতের প্রতিনিধি জানান, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আসন বিন্যাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এদিকে অসুস্থতার কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে অংশ না নিলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন বিএনপিসহ তাদের জোট নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
জানা যায়, গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক, ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেন নেতারা। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আজ রবিবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে এ ছাড়াও জোট ও দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন এবং জামায়াত কিভাবে নির্বাচন করবে এ নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় তারা কিভাবে নির্বাচন করবে এ নিয়ে আলোচনাকালে বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের ধানের শীষ দেয়া হবে না। এ পরিস্থিতিতে জামায়াতের প্রতিনিধি এম এ হালিম বলেছেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
২০ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করব কি না তা দুইএক দিনের মধ্যে জানানো হবে। তিনি বলেন, জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবির কোনটাই পূরণ করা হয়নি। আমরা আবারো বলছি, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে এসব দাবি মেনে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, জোটগত নির্বাচন করতে হলে ১১ নবেম্বরের মধ্যে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, আমরা ইসিকে দুভাবেই চিঠি দেব, যাতে সময় বাড়ানো হয়। সেক্ষেত্রে যদি ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে অনেকে ধানের শীষে নির্বাচন করবেন, আবার কেউ কেউ নিজের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দেন। কয়েকটি দল নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আর জামায়াতে ইসলামী তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য জোটের কাছ থেকে একদিন সময় নিয়েছে। যারা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের যুক্তি, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচনে গিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। সুতরাং না গিয়ে নিজেদের এতদিনের আন্দোলনের সপক্ষে থাকাই ভাল।
বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বৈঠকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তার যুক্তি খ-ন করে বিএনপির বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখনই এমন কঠিন সিদ্ধান্তের কথা ভাবছি না। স্বৈরাচারকে হটাতে হলে নির্বাচনই একমাত্র সমাধান।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় যত উপায় আমাদের সামনে রয়েছে, সবই বিবেচনায় নিতে হবে। আপনারা সব বিকল্প মাথায় রেখেই সার্বিক প্রস্তুতি নিন। বৈঠকে অংশ নেয়া জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মত দিয়েছি। জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচনে যাব। বিকেল ৫টায় প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক। এ বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ২৩ দলীয় জোটের বৈঠক। আর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক। আর এ বৈঠক শেষে রাত ১০টার দিকে নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান জানানো হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র ও দেশের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করব নির্বাচন কমিশন ও সরকার বিএনপি যাতে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে বিনা বাধায় প্রচার চালাতে পারে সে ব্যবস্থা করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২৩ দলীয় জোটের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেয়া সবাই। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মদ ইব্রাহিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাস, মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা এডভোকেট আব্দুর রকিব, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান এডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, পিপলস লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি এর আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগের ২টি বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতারা ছাড়াও সর্বশেষ বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি সভাপতি আসম রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মনোয়ার মন্টু, ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী অংশ নেন। ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকটি রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে চলে প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।
এদিকে দফায় দফায় অনুষ্ঠিত বৈঠককে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গুলশানের বিএনপির চেয়ারপার্সন কার্যালয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে থাকে দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে সেখানে উপস্থিত হন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীরাও। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের নেতা তকদির হোসেন জসিম জানান, তিনি বিবাড়িয়া-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করতে চান। এ জন্যই দলের সিদ্ধান্ত জানতে এখানে এসেছেন।