বিশ্বব্যাপী মহামারীরূপে আবির্ভূত ভয়ঙ্কর ব্যাধি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কমবেশি সব দেশ আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জাপানের মতো দেশগুলোও রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়েছে করোনা মোকাবেলায়। কোন ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক না থাকায় এসব দেশেও চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম, তদুপরি ডাক্তার-নার্সসহ অপ্রতুল ওষুধপত্রের বিষয়টি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী লকডাউন বা শাটডাউন চলতে থাকায় অর্থনীতির চাকা প্রায় অচল তথা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রায় সব দেশেই তীব্র ও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে বেকারত্বসহ বেকারের সংখ্যাও। এর পাশাপাশি খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কাসহ দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে। সে অবস্থায় সবচেয়ে সমস্যা-সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক শ্রম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে জানা যায়, বিশ্বের ১৬৯টি দেশে অন্তত এক কোটি ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী রয়েছে, যাদের অধিকাংশই শ্রমিক। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশে। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ধস নামায় বর্তমানে অধিকাংশই হয়ে পড়েছে বেকার তথা চাকরিচ্যুত। অবৈধ অভিবাসীদের পাশাপাশি এমনকি যারা বৈধভাবে দীর্ঘদিন প্রবাসে কর্মরত, তাদেরও বাংলাদেশে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে। এক হিসেবে জানা যায়, শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই অন্তত দশ লাখ শ্রমিককে ছাঁটাই করে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ২৯ হাজার শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে পারেন। এর পাশাপাশি করোনার ভয়ঙ্কর ছোবল তো রয়েছেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। সেক্ষেত্রে তাদের অসহায় পরিবার ও স্বজনদের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের আসন্ন সঙ্কট-সমস্যার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবশ্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রবাসীদের কল্যাণে দু’শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন, যা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলের বাইরে। এর পাশাপাশি বিদেশ ফেরতদের স্বকর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোন জামানত লাগবে না। তদুপরি দেয়া হবে কৃষি খামার, গবাদি পশু হাঁস-মুরগি পালন, সেলাই মেশিনসহ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রশিক্ষণ। তবে এ নিয়ে যেন কোন নয়-ছয় তথা দুর্নীতি-অনিয়ম না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই এখন সমূহ সঙ্কটে। করোনা ও তেলের দামের কারণে অর্থনীতি বিধ্বস্ত প্রায়। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশীদের জন্য সর্ববৃহৎ ও আকর্ষণীয় শ্রমবাজার সৌদি আরব, ইউএই, কুয়েত বর্তমানে নানা সমস্যার সম্মুখীন। সে অবস্থায় এসব হতভাগ্য শ্রমিক সব হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হলে দেশের অবস্থা কি হবে সে বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের তেমন গভীর চিন্তা-ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এর বাইরেও উন্নত বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে উন্নত শিল্প-কারখানাগুলোতে শ্রমিকের স্থান দখল করে নিচ্ছে রোবট ও কম্পিউটার। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। দেশেই তৈরি করতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ।