সংলাপে এরশাদ আসন ভাগাভাগিকেই গুরুত্ব দিলেন

44

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচন হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা সে অধিকার প্রয়োগ করবে বলে নিশ্চয়তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওযামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাতে গণভবনে এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে সংলাপে তিনি একথা বলেন। রাত সাড়ে সাতটায় আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরুর কথা থাকলেও ১৫মিনিট আগেই তা শুরু হয়।
সংলাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে নেতাদের আমন্ত্রণ জানান। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জোট নেতাদের। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মিলিত জাতীয় জোটের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূত ও জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে প্রথমদিনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সংলাপে গণভবনের সামনে উৎসুক জনতার যেমন ভীড় ছিল সোমবার তা দেখা যায়নি। জাতীয় পার্টি কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও কেউ আসেনি গণভবনের সামনে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে একে একে আসতে থাকেন আমন্ত্রিত নেতারা। সাড়ে সাতটার আগেই সবাই গণভবনে প্রবেশ করেন। আওয়ামী লীগ সহ ১৪ দলের নেতারাও সময়মতো চলে আসেন। সংলাপ শেষে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ইতিবাচক বার্তা দেন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা। এরপর জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সংলাপ সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে এরশাদের জোটের পক্ষ থেকে আসন ভাগাভাগি ও অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলেন জোট নেতারা। সেইসঙ্গে কোন দল নির্বাচনে না এলেও জাতীয় পার্টি আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চিত করেন এরশাদ।
সংলাপে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার চেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন এরশাদ, যা তিনি দুদিন আগে প্রকাশ্য সমাবেশেই বলেন। অর্থাত আসন নিয়ে সংলাপে জাপার দরকষাকষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে সোমবার সন্ধ্যায় বনানীর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে রওনা দেয়ার আগে ভিন্ন কথা বলেছেন জাতীয় পাটিৃর মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা।
স্ত্রী ও দলের জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও মহাসচিব হাওলাদারকে এক গাড়িতে নিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে গণভবনের পথে রওনা হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। তারপর ছিল অন্য নেতাদের গাড়ি।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্য : সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করায় জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি অর্থবহ নির্বাচন হবে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন শেখ হাসিনা। তিনি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় পাটির সার্বিক সহযোগিতার ভূয়ুশী প্রশংসা করেন।
দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে তিনি উন্নতির পথে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জাতির পিতা বাংলাদেশকে যে স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গেছে সেখান থেকে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি, জাতির পিতার আদর্শের পথ ধরে। আমাদের এ পথযাত্রায় আপনারা জাতীয় পার্টি পাশে ছিলেন, আমাদের সাথে ছিলেন, আমরা একসাথে এ দেশকেএগিয়ে নিয়ে গেছি। তিনি বলেন, যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সব দলের সাথে মতবিনিময় করছি। আমরা চাই একটা অর্থবহ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জাতীয় পার্টি পাশে ছিল। একসঙ্গে এদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। জাতীয় পার্টির কাছে থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছি এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার। তারা সে অধিকার প্রয়োগ করবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের কাজগুলো চলছে। তা অব্যাহত থাকবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেটাই রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের ২৩ সদস্য : সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দেন। এর মধ্যে ১৪ দলের শরিক নেতারাও রয়েছেন। সংলাপে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগ সহ ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপুমনি, আব্দুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিমও উপস্থিত ছিলেন। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ, খান মেনন জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল সংলাপে অংশ নেন।
জাতীয় জোটের ৩৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল : এরশাদের নেতৃত্বে ৩৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। যে কটি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে এরমধ্যে সবচেয়ে ঢাউস প্রতিনিধি দল ছিল সম্মিলিত জাতীয় জোটের। জানা গেছে, ৩৩ সদস্য বহনকারী ২২টি গাড়ি গণভবনে সন্ধ্যা সাতটার আগেই প্রবেশ করে।
এরশাদ ছাড়া প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সালমা ইসলাম এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, এমএ ছাত্তার, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসন খান, আলহাজ সাহিদুর রহমান, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, আজম খান, সোলায়মান আলম শেঠ, আতিকুর রহমান আতিক, মেজর (অব.) খালেদ আক্তার, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি ও নুরুল ইসলাম ওমর এমপি। এছাড়া রয়েছেন- বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মান্নান, মহাসচিব এমএ মতিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব জালাল আহমেদ, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক ও বিএনএ’র চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি।