এক সময় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। ফুটবলের সেই সোনালি সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামে (আজকের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) দর্শক উপচে পড়ত। দিন দিন ফুটবলবিমুখ হয়েছে দর্শক। খেলার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। সারা দেশে ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অবকাঠামো থাকার পরও দেশের ফুটবলের অন্ধকার কাটেনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই। এমনকি উপমহাদেশে সাফ ফুটবলেও সাফল্যের দেখা মিলছে না। ফিফা র্যাংকিংয়ে উঁচুতে ওঠার স্বপ্ন কবে পূরণ হবে, কেউ জানে না। ফুটবলের উন্নতি করার জন্য যা কিছু করা দরকার, তার কতটুকু করছে বাংলাদেশের ফুটবল কর্তৃপক্ষ এ প্রশ্নটাও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ফুটবলের মান উন্নয়নে দেশে আদৌ কি কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? দেশের ফুটবল অঙ্গন যখন নানা প্রশ্নের মুখে, তখনই নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে দেশের কিশোর ফুটবলাররা। নেপালের কাঠমাণ্ডুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের কিশোররা। টুর্নামেন্টে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। ২০১৫ সালে প্রথম শিরোপা জেতার সময় টুর্নামেন্টটি ছিল অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সীদের নিয়ে। শিরোপার সঙ্গে ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডও জিতেছে বাংলাদেশ। চার গোল করে প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন বাংলাদেশের নিহাদ। মালদ্বীপকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর নেপালের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের জয় পেয়ে গ্রুপে রানার্স-আপ হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেমিফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা দলটি টাইব্রেকারে পাকিস্তানকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও বাংলাদেশ দলের জয়ের নায়ক বিকল্প গোলরক্ষক মেহেদি টাইব্রেকারে করেছেন তিনটি সেভ।
ফুটবলের এই হতাশার সময়ে কিশোর ফুটবল দলের এই শিরোপা জয় নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের ফুটবল যে একেবারে ফুরিয়ে যায়নি, তার প্রমাণ এই কিশোররা। সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যা পেলে বাংলাদেশের ফুটবল যে ঠিকই জ্বলে উঠতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। আসলে ফুটবল নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে পরিকল্পনামাফিক খেলোয়াড় তুলে আনতে হবে। দেশে এখন স্কুলভিত্তিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এসব আয়োজনের সুফল ঘরে তোলার জন্য চাই সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা। ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে পারলে ফুটবলে জোয়ার আসবেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আবেগ নয়, বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশে উন্নতমানের কোচিং স্টাফ তৈরি, খেলোয়াড়দের শারীরিক সামর্থ্য বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।
অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল দলকে আমাদের অভিনন্দন। এই সাফল্যের হাত ধরে ইতিবাচক পথে ফিরুক বাংলাদেশের ফুটবল।