স্টাফ রিপোর্টার :
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা কাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। এবার সিলেটে ৫৯৮টি মণ্ডপে আয়োজিত হবে দুর্গা পূজা। ইতোমধ্যে পূজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাব-পুলিশও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসব শেষ হবে ১৯ অক্টোবর মহাদশমী পূজার মধ্য দিয়ে।
গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের প্রধান পুরোহিত রজত কান্তি চক্রবর্তী বলেন, ষষ্টির দিনে দেবিকে বিল্লতলায় (বেল তলায়) বেল পাতাদিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানাবেন পুরোহিতরা। সনাতন ধর্মমতে, এই ৫দিনের জন্যে এবার মর্ত্যলোকে ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে আসবেন দেবী। দশমীতে জলবিষর্জনায় শিবের সঙ্গে স্বামীর গৃহে ফিরে যাবেন পালকীতে সওয়ার হয়ে।
তিনি বলেন, দেবী অনেক রূপে আসেন। বৈষ্ণবী রূপে আসা শান্তির প্রতীক। আসুরিক শক্তিতে আসেন অসুর বদ করতে। ঘোটকে চড়ে আসা মানে ছত্রভঙ্গ তথা হানাহানি-মারামারির ইঙ্গিত বহন করে। পালকীতে সওয়ার হওয়া তথা গুপ্ত অপরাধের অশনি সংকেত। তাই বিসর্জনের পর প্রত্যেক মণ্ডপে শান্তির জন্য আরাধনা করবেন তারা।
জানা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় এবার ৫৯৮ মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। এরমধ্যে মেট্রো এলাকায় ১৩৩টির মধ্যে নগর এলাকায় ৬৩ মণ্ডপের মধ্যে ৪৮টি সার্বজনীন এবং ব্যক্তিগত ১৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। দুর্গোৎসবকে ঘিরে সিলেটজুড়ে থাকবে নিñিদ্র নিরাপত্তা। নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কর্তব্য পালন করবেন। র্যাব-পুলিশের সদস্যরা স্ট্যান্ডবাই ডিউটি ছাড়াও থাকবে টহল ও সিয়েরা পার্টি। বখাটেদের উৎপাত ঠেকাতে পুলিশের নারী সদস্যরাও সাধারণ পোশাকে বিচরণ করবেন সর্বত্র। দুর্গাপূজাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে কোনো গুজব না ছড়ায়, তা তদারকি করবেন পুলিশের চৌকস কর্মকর্তারা।
এরই মধ্যে পূজা উদযাপনে ২৫ নির্দেশনা জারি করেছে এসএমপি। এসবের মধ্যে চুরি ছিনতাইসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডরোধে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রাখা, মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর ও হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা রাখা। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও কোনো ধরনের অতৎপরতা লক্ষ্য করা গেলে তাৎক্ষণিক জাতীয় হেল্প ডেস্ক নাম্বার ‘৯৯৯’ এ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীলরা।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, দুর্গোৎসবকে নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে ৩০/৪০ জন ব্যাজধারী স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী মণ্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বলেন, দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সাদা পোশাকে পুলিশের সহস্রাধিক জনবল মাঠে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। মণ্ডপের গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। কোনোও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে। সেদিকে বিবেচনায় এনে ছক চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার-ভিডিপি সদস্যরাও মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
র্যাব-৯ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দুর্গোৎসবে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এরইমধ্যে র্যাব’র গোয়েন্দা সদস্যরাও মাঠে কর্মরত রয়েছে।
গতকাল শনিবার র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিডিয়া অফিসার মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে র্যাব-৯। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো জানান, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, চরমপন্থি বা স্বার্থান্বেষী মহল ও সন্ত্রাসীরা যাতে কোন ধরনের অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে সে জন্য র্যাব-৯, সিলেটে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। র্যাবের বিশেষ টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও মোটরসাইকেল টহলসহ র্যাব সদস্যরা বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও তার আশেপাশের এলাকায় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অবস্থান করবেন। এছাড়া যেকোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের খবর জানানোর জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নম্বর:- সিলেট সদর- ০১৭৭৭৭১০৯৯৯, শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প- ০১৭৭৭৭১০৯২৮, সুনামগঞ্জ ক্যাম্প- ০১৭৭৭৭১০৯৪১।