নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির হাওয়া তত জোরদার হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা আগামী মাসের প্রথম দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট এরই মধ্যে মাঠে নেমে গেছে। দলীয় নেতারা সভা-সমাবেশ করে মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। গত রবিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করেছে বিএনপি। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য দলটি সাত দফা দাবিও ঘোষণা করেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া থেকেও পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। বিএনপি আশা করছে, শিগগিরই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হবে এবং সরকারকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করা যাবে। রাজনীতির উত্তাপ ছড়ানো শুরু করায় দেশের ব্যবসায়ী মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ একে স্বাভাবিক বলে মেনে নিলেও অনেকে ব্যবসার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে কি না সেই আশঙ্কায় রয়েছেন।
গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের জন্য সুস্থ রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনীতিতে সেই সুস্থতার অভাব রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলগুলোর স্বাভাবিক রাজনৈতিক অধিকারও কেড়ে নিতে চায়। কিছু বিরোধী দলও স্বাভাবিক রাজনীতি ছেড়ে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলার আশ্রয় নেয় কিংবা জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন করে—এমন কর্মসূচিকেই প্রাধান্য দেয়। তার পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও অসহিষ্ণুতা। এ অবস্থায় রাজনীতি হয়ে ওঠে সংঘাতময়। আর সাধারণ মানুষ এই রাজনীতিকে ভয় পায়। আমাদের রাজনীতিতে আরেকটি প্রবণতা জোরালোভাবে বিদ্যমান, তা হলো ক্ষমতায় একবার এলে আর ক্ষমতা ছাড়তে না চাওয়া। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নানা রকম কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার কারণেই মূলত এ দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তিত হয়েছিল। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিভাবে পছন্দের লোক দিয়ে বানানো যাবে, তা নিয়েও অতীতে অনেক নাটক হয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে অতীতে তিন মাসের জায়গায় দুই বছর স্থায়ী অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ক্ষমতায় এসেছে। রাজনীতির সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে তাই রাজনীতির সুস্থতা রক্ষায় আরো মনোযোগ দিতে হবে। বিরোধিতা যেন সংঘাতপূর্ণ না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। তেমন হলে আবারও তৃতীয় কোনো পক্ষ তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আমরা চাই, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ হোক। আর সে ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনিভাবে আমাদের নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী। সেই শক্তি তাঁদের যথার্থভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও পারস্পরিক আস্থা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে।