অনেক প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

59
Bangladesh cricketer Rubel Hossain (R) celebrates with his teammates after he dismissed Pakistan batsman Shoaib Malik (L) during the one day international (ODI) Asia Cup cricket match between Bangladesh and Pakistan at the Sheikh Zayed Stadium in Abu Dhabi on September 26, 2018. (Photo by ISHARA S. KODIKARA / AFP) (Photo credit should read ISHARA S. KODIKARA/AFP/Getty Images)

স্পোর্টস ডেস্ক :
আবুধাবি পাকিস্তানের অন্যতম হোম গ্রাউন্ড। এখানে তাদের চমৎকার রেকর্ড। আর তপ্ত মরুর শহরে এবারই প্রথম বাংলাদেশ। সাকিব, তামিমের মতো সেরা দুই সদস্য আবার দলের বাইরে। শুরুতে মহা ব্যাটিং বিপর্যয়। ১২ রানে নেই তিন উইকেট। অসংখ্য প্রতিকূলতা। সেই প্রতিকূলতা জয় করেই এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে মাশরাফিরা জিতেছে ৩৭ রানে (বাংলাদেশ ২৩৯, পাকিস্তান ২০২)। মাঠে উপস্থিত হাজার দশেক প্রবাসী প্রিয় দলের জয় প্রাণভরে উপভোগ করেছেন।
মুশফিক (৯৯ রান) ও মিথুনের (৬০ রান) দারুণ ব্যাটিং ও পরে বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মনে রাখার মতো জয়টা তুলে নেয় বাংলাদেশ। অসাধারণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামান তিনি। গত ম্যাচেও কাটার বয়ের কারণে শেষ ওভারের নাটক জিতেছিল বাংলাদেশ।
২৪০ রানের টার্গেট ছিল পাকিস্তানের সামনে। তেমন বড় টার্গেট নয়। তবে এই রানই যে তাদের জন্য এতটা কঠিন হয়ে উঠবে, ভাবা যায়নি।
মিরাজের হাত ধরে শুরুতেই উইকেট পেয়ে উজ্জ্বিবিত হয়ে ওঠে দল। মিরাজ ১ রানে ফেরান ফকর জামানকে। এরপর জ্বলে ওঠেন মুস্তাফিজুর রহমান। দারুণ স্পেল, পরপর দুই উইকেট। বাবর আজমকে ১ রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন কাটার বয়। মুস্তাফিজের পরের শিকার সরফরাজ আহমেদ।
তবে তাতে বড় অবদান উইকেট কিপার মুশফিকের রহিমের।এবং যেভাবে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন তাতে ভয়ের কারণই ছিল। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন সরফরাজ। ক্যাচটি সহজ ছিল না। ঝাপিয়ে পড়ে দুই হাতে বল তালুবন্দি করেন মুশি। তিনি এমনভাবে পড়ে ক্যাচটি ধরেছিলেন যে, শরীরের পুরো ভর পড়েছিল বুক ও কোঁমরের উপর।তিনি হয়তো একটু ব্যথাও পেয়েছিলেন।

Bangladesh cricketer Rubel Hossain (R) celebrates with his teammates after he dismissed Pakistan batsman Shoaib Malik (L) during the one day international (ODI) Asia Cup cricket match between Bangladesh and Pakistan at the Sheikh Zayed Stadium in Abu Dhabi on September 26, 2018. (Photo by ISHARA S. KODIKARA / AFP) (Photo credit should read ISHARA S. KODIKARA/AFP/Getty Images)

মাত্র ১৮ রানে তিন উইকেট ফেলে দিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয় টাইগাররা। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ইমামুল হক ও শোয়েব মালিক দৃঢতা দেখান। বড় পার্টনারশিপের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। ৬৭ রান যোগ করার পর রুবেলের বলে মাশরাফির অসাধারণ ক্যাচে পরিণিত হন শোয়েব।
এর কিছু পর শাদাব খানকে ৪ রানে স্লো মিডিয়াম পেসে বিদায় করেন সৌম্য সরকার। ৯৪ রানে ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশর হাতে। তবে এখান থেকে দলকে টেনে নিতে থাকেন বিপজ্জনক ইমামুল হক। তিনি এমন এক ব্যাটসম্যান যিনি একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানেন। তাকে সঙ্গ দেন আসিফ আলী। অবশ্য ২২ রানের মাথায় ফিরতে পারতেন এই আসিফ। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকের জায়গায় কিপিং করা লিটন দাস। অবশেষে সেই আসিফকে মিরাজের বলে আসিফকে ৩১ রানে স্ট্যাম্প করেন লিটন। ৭২১ রানের জুটি ভাঙার পর স্বস্তি ফিরে বাংলাদেশ শিবিরে।
সেই স্বস্তি আনন্দে রূপ নেয় যখন ৮৩ রানে ইমামুল হককে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে ত্বরিৎ স্ট্যাম্পিং করেন লিটন। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। গ্যালারিতে বাংলাদেশি সমর্থকদের উল্লাস শুরু হয়ে যায়। এরপর হাসান আলীকে ৮ রানে মুস্তাফিজ বিদায় করেন। মোহাম্মদ নেওয়াজকেও ৮ রানে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে পাকিস্তান থামে ২০২ রানে। মুস্তাফিজ ছাড়াও ভালো বল করেছেন অন্য সবাই। ২ উইকেট নেন মিরাজ। একটি করে পান রুবেল, সৌম্য ও রিয়াদ।
এরআগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। মুশফিকের ৯৯ ও মিথুনের ৬০ রানের কল্যাণে ৪৮.৫ ওভারে ২৩৯ রান তুলে বাংলাদেশ। শুরুটা জঘন্য হয়েছিল। নাজমুল হাসান শান্তকে বাদ দিয়ে সৌম্য সরকারকে একাদশে নিয়েও লাভ হয়নি। ৫ বলে ০ রানে ফিরে গিয়ে আবারও প্রমাণ করলেন আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অবস্থায় নাই তিনি। গত সাত ওয়ানডেতে তার ব্যাট থেকে এসেছে ০, ২৮, ৩, ৩, ০, ৮, ০। সৌম্যর অফ ভয়াবহ অফ ফর্ম অন্য দুই ফরম্যাটেও।
গত ১১ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে সৌম্য করেন যথাক্রমে ০, ১৪, ২৪, ১, ১০, ১, ৩, ১৫, ০, ১৪, ৫। আর সর্বশেষ সাত টেস্ট ইনিংস তার রান যথাক্রমে ১০, ৮, ১৫, ৩৩, ৯, ৯, ৩।
সাকিবের জায়গায় সুযোগ পাওয়া মুমিনুল হক দারুণ চার মেরেছিলেন শুরুতেই। ভালো করার ঘোষণা ছিল ওই চারে। কিন্তু পরক্ষণেই বোল্ড হয়ে যান তিনি। লিটন এক ইনিংস একদিন ভালো করেন তো, ৫/৭ ইনিংসে রান নেই। গত ম্যাচে ৪২ রান করা লিটন এদিন থামেন ৬ রানে। মহা বিপর্যয়। ১২ রানে তিন উইকেট শেষ। ম্যাচের বারটা বাজিয়ে দিয়ে গেছেন তিন ব্যাটসম্যান।
এখান থেকে দলকে টেনে তুলা শুধু কঠিন নয়, খুবই কঠিন। তবে এমন কঠিন কাজ বহুবার করে দেখিয়েছেন মুশফিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে এমন পরিস্থিতিতে দলকে টেনে তুলেছিলেন ১৫০ বলে ১৪৪ রান করে।
সঙ্গে পেয়েছিলেন মোহাম্মদ মিথুনকে। মিথুন করেছিলেন লড়াকু ৬৩ রান। মুশফিক-তৃতীয় উইকেট জুটিতে এসেছিল রেকর্ড ১৩১। পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই চতুর্থ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি।
চরম বিপদে দলকে আবারও উদ্ধার করলেন এই জুটি। আজ চতুর্থ জুটিতে ১৪৪ রান যোগ করেন মুশফিক ও মিথুন। ৮৪ বলে ৬০ রান করার পর আউট হন মিথুন।
তবে মুশফিক তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশি। এগিয়ে যাচ্ছিলেন ৭ নম্বরে ওয়ানডে সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু এক ৯৯ রান করার (মুশফিকই একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান যিনি ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না) পর শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ফিরতে হয় তাকে। ১ রানের আফসোস তো বটেই, দলও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মুশফিক উইকেট থাকলে স্কোরের চেহারা অন্যরকম হতে পারত।
গত ম্যাচে দারুণ খেলা ইমরুলকে এদিনও সাবলীল মনে হচ্ছিল। কিন্তু ১০ বলে ৯ করার তাকে ফিরতে হয় এলবি হয়ে। এরপর মিরাজ আউট হন ১২ বলে ১১ রান করে। দায়িত্ব নিয়ে খেলছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিস্তু তাকে বিদায় নিতে হয় ২৫ বলে ২১ রান করার পর। ১২ বলে ১৪ রান করে মাশরাফি আউট হয়ে গেলে ৭ বল বাকি থাকতেই ২৩৯ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।পাকিস্তানের জুনায়েদ খান মাত্র ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৩৭ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইনিংস: ২৩৯ (৪৮.৫ ওভার)
(লিটন দাস ৬, সৌম্য সরকার ০, মুমিনুল হক ৫, মুশফিকুর রহিম ৯৯, মোহাম্মদ মিথুন ৬০, ইমরুল কায়েস ৯, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৫, মেহেদী হাসান মিরাজ ১২, মাশরাফি বিন মুর্তজা ১৩, রুবেল হোসেন ১, মোস্তাফিজুর রহমান ০*; জুনায়েদ খান ৪/১৯, শাহীন শাহ আফ্রিদি ২/৪৭, হাসান আলী ২/৬০, মোহাম্মদ নওয়াজ ০/৩৯, শোয়েব মালিক ০/১৪, শাদব খান ১/৫২)।
পাকিস্তান ইনিংস: ২০২/৯ (৫০ ওভার)
(ফখর জামান ১, ইমাম-উল-হক ৮৩, বাবর আজম ১, সরফরাজ আহমেদ ১০, শোয়েব মালিক ৩০, শাদব খান ৪, আসিফ আলী ৩১, মোহাম্মদ নওয়াজ ৮, হাসান আলী ৮, শাহীন শাহ আফ্রিদি ১৪*, জুনায়েদ খান ৩*; মেহেদী হাসান মিরাজ ২/২৭, মোস্তাফিজুর রহমান ৪/৪৩, মাশরাফি বিন মুর্তজা ০/৩৩, রুবেল হোসেন ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১/৩৮, সৌম্য সরকার ১/১৯)।