রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের আদৌ কোনো ইচ্ছা মিয়ানমারের আছে কি না তা নিয়েই এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপে গত বছর প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি তারা। উপরন্তু সেখানে এখনো রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে জানা যায়। ফলে এখনো অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এ অবস্থায় গত রবিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় এক অনুষ্ঠানে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং যে মন্তব্য করেছেন তাকে শুধু ঔদ্ধত্য বললে ভুল বলা হবে, বরং তিনি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একধরনের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের দেওয়া প্রতিবেদনে ‘গণহত্যার’ জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের সুপারিশ করা হয়। এর এক সপ্তাহের মাথায় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন, রাখাইনের ঘটনা নিয়ে ‘অগ্রহণযোগ্য কোনো দাবি’ সেনাবাহিনী মেনে নেবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তাঁদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কিংবা তাঁদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কোনো দেশ, সংস্থা বা কোনো গোষ্ঠীর নেই। তাঁর এই বক্তব্যের পরও কি আশা করা যায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশটি প্রকৃত অর্থে কোনো উদ্যোগ নেবে?
আশা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বর্তমান অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্ব পাবে। গত সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শরণার্থী সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে আছে—এক. রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বাতিল এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। দুই. নাগরিক সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে, প্রয়োজনে সেফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল) তৈরি করতে হবে। তিন. জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের যদি ন্যূনতম সদিচ্ছাও থাকে, তাহলে এই তিন দফা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে কোনো রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাইবে না এবং তারা স্বেচ্ছায় ফিরে না গেলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কেউ তাদের জোর করে সেখানে ফেরত পাঠাতে পারবে না। কিন্তু মিয়ানমার সেনাপ্রধানের কথায় সেই সদিচ্ছার লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় কি?
মিয়ানমারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন করে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে দুই প্রতিবেশী ভারত, চীনসহ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকেও। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নির্দিষ্ট করতে হবে এবং দ্রুত সেগুলো কার্যকর করতে হবে।