আজ পাকিস্তানকে হারালেই ফাইনালে বাংলাদেশ

70

স্পোর্টস ডেস্ক :
দেখতে দেখতে এশিয়া কাপ শেষ মুহূর্তে এসে পড়েছে। আর আছে তিনদিন। আজ ‘সুপারফোরে’র শেষ ম্যাচ। শুক্রবার টুর্নামেন্টের ফাইনাল। আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। একেতো আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। আবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটিতে জিতলেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারালে একসঙ্গে দুই প্রাপ্তি মিলে যাবে। আর হারলেই হবে বিদায়।
ম্যাচটি যেন এশিয়া কাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচেও পরিণত হয়ে গেছে। ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনাল ম্যাচে রূপ নিয়েছে। ভারত আগেই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে। আজ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যে দল জিতবে তারাই ফাইনালে খেলবে। আরেকদল নেবে বিদায়। পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই শুক্রবার ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে এবার বিধ্বস্ত হয়ে পড়া পাকিস্তানকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ? আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে ম্যাজিশিয়ান হয়ে ওঠা মুস্তাফিজুর রহমান খুব সুন্দরভাবে পাকিস্তান দলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ক্রিস গেইলের সঙ্গে পাকিস্তানকে মিলিয়েছেন। গেইলকে নিয়েও আগাম অনুমান করা যায় না। আবার পাকিস্তানকে নিয়েও করা যায় না। খেলার দিনটিতেই শুধু বোঝা যায় কেমন করে। গেইল যেমন নিজের দিনে সেরা। গেইল যেদিন ব্যাট হাতে ঝলক দেখান সেদিন প্রতিপক্ষ অসহায় আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানের বেলাতেও তাই। যেদিন পাকিস্তান ক্রিকেটাররা জ্বলে ওঠেন সেদিন দিনটি শুধুই তাদের হয়ে থাকে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই তার প্রমাণ। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ফেবারিট তকমা গায়ে না জড়িয়েও শিরোপা জিতে।
এবার এশিয়া কাপে পাকিস্তান দলকে সবচেয়ে ফেবারিট দল ধরা হয়েছিল। খেলা যে হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। যেটি পাকিস্তানের ‘হোম ভেন্যু’। কিন্তু শুরু থেকেই পাকিস্তান কেমন টালমাটাল দল। এক হংকংয়ের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচটি ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোন ম্যাচে পাকিস্তানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভারতের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে ও সুপারফোরে নাজেহাল হয়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে জিততেও ঘাম ঝড়ে গেছে। হারের সম্মুখেই পড়ে গিয়েছিল। এমন দলকে এখন তাই আর কেউই ফেবারিট তালিকায় রাখতে পারছেন না। কিন্তু পাকিস্তান যে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল।
মুস্তাফিজ তাইতো বলেছেন, ‘কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেমন গেইলের কথা সবাই বলে যে গেইল যেদিন খেলে, সেদিন আর কারও কিছু করার থাকে না। তেমনি পাকিস্তানেরও বিশ্বাস নাই। ওরা যেদিন খেলে সেদিন কাউকে পাত্তা দেয় না। যদি আমাদের ভাগ্যে থাকে তাহলে ওদের উল্টো হতে পারে। ভাগ্যে না থাকলে নাই।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ভাগ্যকেও সঙ্গে চাচ্ছেন মুস্তাফিজ। ঠিক যেমনটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ছিল। আফগানিস্তানের হাতেই শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটি ছিল। কিন্তু মুস্তাফিজ বল হাতে নিয়ে ‘ম্যাজিক’ দেখান। যেটাকে কৃতিত্ব দেয়ার সঙ্গে ভাগ্যকেই টেনে আনতে হয়। গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর থেকেই টালমাটাল ছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে হারের পর সুপারফোরে ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি। আবার যখন আফগানিস্তান সামনে আসে সেই ম্যাচটিতেও হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শেষ ওভারে গিয়ে জয় পায় বাংলাদেশ। নাটকীয় জয় তুলে নেয়। এই জয়টি এখন ক্রিকেটারদের ভেতর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছে। মনোবল চাঙ্গা করেছে। এ মনোবল নিয়ে এখন পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করা গেলেই হয়। তাহলে সর্বশেষ চার এশিয়া কাপের তিনটিতেই ফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করবে বাংলাদেশ।
দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ওয়ানডে খেলার স্মৃতি বাংলাদেশকেই সুখ দিচ্ছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের মাটিতে দুই দল সর্বশেষ ওয়ানডে খেলে। বাংলাদেশ টানা তিন ম্যাচেই জিতে। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে। ১৯৯৯ সালের পর যে দলকে হারানোই যাচ্ছিল না যে দলের বিপক্ষে সব ফরমেটের ম্যাচ মিলিয়ে ’৯৯ সালের পর টানা ৪০ ম্যাচে হারে বাংলাদেশ; সেই দলকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। সেই জয়গুলো বাংলাদেশ দলকে প্রেরণা দিচ্ছে। আবার প্রতিশোধ নেয়ার তীব্র আকাক্সক্ষাও থাকছে।
এশিয়া কাপে একবারই টি২০ ফরমেটে খেলা হয়। সেটি ২০১৬ সালে। তখন বাংলাদেশই জিতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপ খেলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নেই বাংলাদেশের। ১২টি এশিয়া কাপ ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। সঙ্গে ২০১২ সালের ফাইনালে জয়ের এত কাছে গিয়েও ২ রানে হারের জ্বালাতো এখনও পোড়ায়। সেই জ্বালাই বারবার পাকিস্তানকে হারানোর জেদ তৈরি করে। সেই জেদ এবার জয়ে পরিণত হয়ে গেলেই হলো। বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করতে পারলেই হলো।