জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভায় ছাত্রলীগকে আদর্শিক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এমন অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যায়। কিছুদিন আগেও ছাত্রলীগের নামে যথেচ্ছাচারের অভিযোগ শোনা গেছে। অথচ এই ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। দেশের সব রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের রয়েছে উজ্জ্বল ভূমিকা। অথচ গত কয়েক বছরে দেশের ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
দেশের ছাত্ররাজনীতি অনেক আগেই বিপথে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আগের দিনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সম্মানের চোখে দেখা হতো। এই সামাজিক অবস্থান এখন আর আছে বলে মনে হয় না। ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে সবার মধ্যেই একধরনের নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে। এর সংগত কারণও রয়েছে। দেশের ছাত্রসংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলেই তা স্পষ্ট হয়। সরকারি দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের দায় সবচেয়ে বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব আজকের দিনের ছাত্রনেতৃত্বের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে। কাজেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের দায় ও দায়িত্ব অনেক বেশি। নতুন করে উদ্যোগ নিতে পারলে দেশের ছাত্ররাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। অবশ্য ছাত্রলীগের নতুন কমিটির নানা উদ্যোগ এরই মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সংগঠনের নতুন সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি এক বার্তায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সাইবার ইউনিট গঠনের কথাও বলা হয়েছে। চলতি মাসেই একটি ট্রাফিক ক্যাম্পেইন করার কথাও ছাত্রলীগ ভাবছে বলে খবরে প্রকাশ। গত ঈদুল আজহার পর কক্সবাজারে বর্জ্য অপসারণের কাজ করে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এভাবে একের পর এক ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত হতে পারলে ছাত্রলীগ যেমন মানুষের মধ্যে স্থায়ী আসন করে নিতে পারবে, তেমনি ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে মানুষের মনে নতুন করে ইতিবাচক ধারণার জন্ম হবে। সংগঠনের অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইতিবাচক দিক নিয়েই কথা বলেছেন। যে সংগঠনের নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম, সেই সংগঠন সম্পর্কে মানুষের মনে নতুন করে ইতিবাচক ধারণা জন্ম দিতে হবে।
ছাত্রলীগের আদর্শ হচ্ছে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। শিক্ষার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়াই হোক ছাত্রলীগের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশে একটি মেধাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ এখন থেকেই কর্মসূচি হাতে নিতে পারে। আগের মতো পাঠচক্র ফিরিয়ে এনে সংগঠনের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তা ছড়িয়ে দিতে পারে। ক্ষমতা নয়, মেধার চর্চায় মনোনিবেশ করুক ছাত্রলীগ।