বাংলাদেশ ও ভারত, দুই প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে উষ্ণ, গভীর ও কার্যকর। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা বর্তমানে দৃশ্যমান, তা অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি। দুই দেশের এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় আবারও ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেকের চলমান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। এতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয় এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এক টুইট বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, পারস্পরিক স্বার্থেই দুই দেশ একে অপরকে সহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন, এক কোটিরও বেশি মানুষকে আশ্রয়দান ও দীর্ঘ ৯ মাস তাদের ভরণপোষণ, ভারতের কয়েক হাজার সৈনিকের প্রাণ উৎসর্গ করা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অক্লান্ত পরিশ্রম কোনো কিছুকেই ছোট করে দেখার উপায় নেই। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের ক্ষমতায় আসে পাকিস্তানি ভাবধারার শাসকরা। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আবার তলানিতে চলে যায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে সেই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমানে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এরই মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, গঙ্গার পানিবণ্টন, স্থলসীমান্ত নির্ধারণ ও ছিটমহল বিনিময়সহ দুই দেশের মধ্যকার অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান হয়েছে। তার পরও অনেক সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ সীমান্তযুক্ত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এমনটাই স্বাভাবিক। সর্বশেষ বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা জানা না গেলেও আমরা আশাবাদী শিগগিরই এই চুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে। ট্রানজিট, যৌথ বিদ্যুৎ উৎপাদন, আঞ্চলিক গ্রিড স্থাপনসহ আরো অনেক বিষয়েই দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করি, দুই প্রতিবেশী দেশ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একইভাবে এগিয়ে যাবে।
আঞ্চলিক উন্নয়নে বিমসটেক খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নেতৃত্বে সার্ক, বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) ও অন্যান্য আঞ্চলিক উদ্যোগ ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে। ১৮ দফা কাঠমাণ্ডু ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে বিমসটেক সম্মেলন। এতে বিমসটেকভুক্ত সাতটি দেশের মধ্যে গ্রিড কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা এবং ফৌজদারি ও আইনি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কিত দুটি এমওইউ সই হয়েছে। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতার এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে।