আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর: প্রতিরোধের সংগ্রাম। আদিবাসীদের জীবনধারা, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তাদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ইত্যাদি সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি তাদের সবার সমর্থন বৃদ্ধি করা- সিলেটে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ বক্তব্য উঠে আসে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে এ বছর জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিপাদ্য হচ্ছে ; “ওহফরমবহড়ঁং ঢ়বড়ঢ়ষবং’ সরমৎধঃরড়হ ধহফ সড়াবসবহঃ” অর্থাৎ ‘আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর: প্রতিরোধের সংগ্রাম।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সিলেট এবং এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো), সিলেট এর যৌথ উদ্যোগে ৯ আগষ্ট ২০১৮ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে বিকাল চারটায় স্থানীয় বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সনাক সদস্য এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সিলেট কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপত্বি করেন সনাক সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ। দিবসের প্রতিপাদ্যের উপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন একডোর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নোংপকলৈ সিনহা। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু গোয়ালা, গারো সম্প্রদায়ের সভাপতি জোসেফ হাউই, বেলার সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট অঞ্চলের সভাপতি আব্দুল করিম কিম, সনাক সহ-সভাপতি এস.রিনা দেবী ও এ. কে শেরাম, সনাক সিলেটের ইয়েস সদস্য আতিক রহমান, তৌকির আহমদ এবং টিআইবি সিলেটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমা খানম নাজু।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশেও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ইতিহাস নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের ইতিহাস, জোরপূর্বক দেশান্তরের ইতিহাস, এ অঞ্চলে বার বার আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক দেশান্তরী হতে হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল, সিলেট অঞ্চল, উত্তরবঙ্গ ইত্যাদি অঞ্চলসমূহের আদিবাসী জনগণ দেশান্তরী হয়েছেন। সিলেটে একসময় পাত্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক হলেও বর্তমানে এ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মাত্র ৩ হাজারের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। অনেকেই দেশান্তরিত হয়েছেন অথবা অন্যত্র চলে গেছেন নিরাপত্তার কারণে। বর্তমানে এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সান্তাল, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খুমি, পাহান, খাসি, মণিপুরী, পাত্র, চা শ্রমিক, ওঁরাও, হাজং ইত্যাদিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী।
আদিবাসী জনগোষ্ঠী যেহেতু রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে এবং ক্ষমতা কাঠামোয় তাঁদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে, তাই দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব তাদের উপর তুলনামূলক বেশী। আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা সহ সকল সামাজিক উন্নয়ন কাঠামোয় তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিজ্ঞপ্তি