কাজিরবাজার ডেস্ক :
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর হামলার ঘটনায় দলীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এই কথা জানান। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের মতো নিজ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন কাদের। সকাল থেকে নিজ দফতরে কাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক সতীর্থ, নিজ দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় নূরের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সবার রয়েছে। ডাকসুর ভিপি আমাদের দলীয় এবং সরকারের সমালোচনা করতেই পারেন। যত কিছুই হোক যে হামলা হয়েছে সেটি নিন্দনীয় ও বর্বর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম হাসপাতালে নূরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছেন। নেত্রী সুস্পষ্ট বলেছেন, যারা এ হামলা করেছে তাদের দলীয় পরিচয় যাই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রকাশ্যে এই হামলার সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন নেত্রী।
এই হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতাকে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা হামলা করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে হামলা করেছে।
হামলায় ছাত্রলীগ নেতা মামুন নেতৃত্ব দেয়, সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, যদি ছাত্রলীগের কেউ এই হামলায় জড়িত থাকে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এই হামলা যে করেছে, সে দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তদের ক্ষমা নাই।
এই ঘটনায় সরকার বিব্রত কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, অবশ্যই সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। তবে সোনাগাজীর ঘটনা, রাজশাহীর শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা এবং বুয়েটের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতারা কিন্তু রেহাই পায়নি। তাদের কিন্তু ছাড় দেয়া হয়নি। এ বিষয়গুলো সিরিয়াসলি দেখছি।
তিনি বলেন, ডাকসুর ভিপি আমাদের সমালোচনা করতে পারে, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার তার আছে। এখানে অন্যান্য যে বহিরাগতরা আসে এসব কথা অনেকে বলে, যত কিছুই হোক, যে হামলা হয়েছে এটা নিন্দনীয় ঘটনা, আমি এটার নিন্দা করি।
রবিবার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচীর পর ডাকসু ভবনে নূরদের ওপর হামলা হয়। ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকেও এই হামলায় দেখা যায়। হামলায় আহত নূরসহ ২৮ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা তুহিন ফারাবীকে রাতে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সোমবার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফারাবীকে নিউরোলজি ওয়ার্ডে নেয়া হয়। এখন নূর, ফারাবীসহ মোট পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগের বার বার খারাপ খবরের শিরোনাম হওয়া নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, মাঝে মাঝে এগুলো হয়, এখানে আবার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে নামে একটি প্রতিষ্ঠান-সেটা তো সরাসরি আমাদের দলের সঙ্গে জড়িত নয়, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চেরও কেউ কেউ জড়িত। তিনি বলেন, হামলার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রলীগের একজনের কথা শুনেছি, ছাত্রলীগ তাকে আগেই বহিষ্কার করেছে অপকর্মের জন্য, বিতর্কিত বলে অনেক আগেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, যেই হোক, অপকর্মকারীকে অপকর্মকারী হিসেবেই দেখব, কোন প্রকার ছাড় দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। রবিবারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল কিনা- এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, নিজের দলের লোকজন বুয়েটে তো একজনকে মেরেছে, বাকি যারা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তাদেরও তো আমরা হারালাম, তারা ছাত্রলীগের কর্মী, দলের লোক বলে ঘরের লোক বলে রেহাই দিইনি, প্রশ্রয় দেইনি। ভবিষ্যতেও যে কেউ অন্যায় করলে আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় দেবে এমন ধারণা করার কারণ নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মতো দেশে এত মানুষের বাস। রুলিং পার্টি বিশাল পার্টি। এখানে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটায়। বিষয়গুলো খুব সিরিয়াসভাবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশীরা চাইলে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে : ‘ভারতে থাকা বাংলাদেশীরা চাইলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
এর আগে ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোওয়াল বলেন ‘বাংলাদেশ থেকে আর কেউ আসামে ঢুকতে পারবে না’। বিষয়টি উল্লেখ করে, সেখানকার বাংলাদেশীরা দেশে ফিরতে চাইলে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা চাইলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
এ সময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিএনপির অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা হয়েছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের বর্বরতাকেও তা হার মানিয়েছে। সেই সময় অনেকেই জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।