সড়কে দুর্ঘটনা নয়, একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে শুধু আন্দোলনকারী শিশুদের নয়, এমন দাবি অনেক বিশিষ্টজনদেরও। লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, কোনো শৃঙ্খলা না মানা এমনই অনেক কারণে সড়কে এ রকম হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এ জন্য আইনের দুর্বলতাকেই প্রধানত দায়ী করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার মন্ত্রিসভায় নতুন সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সড়কে চলা নৈরাজ্যের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী তারা চালকের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসসহ কাগজপত্র চেক করে, গাড়িগুলোকে লেন মেনে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চলাচলে বাধ্য করে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশও গত রবিবার থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন শুরু করে। কিন্তুসড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থাই দেখা গেছে। এমনকি ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালাতেও দেখা গেছে অনেককে। জানা যায়, হঠাৎ করেই বিআরটিএ কার্যালয়ে ফিটনেস সংগ্রহের জন্য গাড়ির ভিড় জমে গেছে। কিন্তু সেখানে দালালদেরও সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। ফলে ফিটনেস না থাকলেও অনেক গাড়ি হয়তো ফিটনেস সনদ পেয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরার প্রধান কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সদিচ্ছার অভাব। অভিযোগ আছে, টাকা দিলে গাড়ি চালাতে না জানলেও বিআরটিএ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণ নেওয়া বা পরীক্ষা দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। একইভাবে ফিটনেস সনদ নিতে গাড়ি দেখানোরও প্রয়োজন হয় না। একই অবস্থা সড়কেও। গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ছে, ইন্ডিকেটর লাইট নেই কিংবা জ্বলছে না, বেপরোয়া গতিতে চলছে, দুই গাড়িতে প্রতিযোগিতা করছে দেখার কেউ নেই। ট্রাফিক পুলিশকে অন্যদিকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ‘লাইনম্যান’ দিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগও আছে। এ অবস্থায় নতুন আইন করে কতটুকু লাভ হবে, তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ছয় বছর আগে গাড়িতে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট প্রদান শুরু হয়েছে, অথচ এখনো অনেক গাড়িতে সেই পুরনো টিনের প্লেটই দেখা যায়। ডিজিটাল প্লেটে একটি আরএফআইডি ট্যাগ থাকে, যার সাহায্যে গাড়িগুলোর অবস্থান জানা যায়। সে জন্য আরএফআইডি চেকপোস্ট স্থাপন জরুরি। সারা দেশের মধ্যে শুধু রাজধানীতে এমন মাত্র ১২টি পোস্ট স্থাপিত হয়েছে বলে জানা যায়। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার জন্য স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ব্যবস্থা শুধু বিআরটিএর মিরপুর কেন্দ্রে রয়েছে। কিন্তু সেটিরও ব্যবহার সীমিত বলে জানা যায়। এখানে মনে হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাই অটোমেশনের বিরোধী। বাড়তি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই এমন বিরোধিতা বলে মনে করা হয়। এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে নতুন আইন কি পারবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে?
আমরা চাই, নতুন আইনে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং রাস্তায় তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হোক। আইন বাস্তবায়নে কারো গাফিলতি থাকলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হোক।