পাহাড় ধস রোধে পদক্ষেপ

44

বর্ষা এলেই পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে দিন কাটায়। না জানি কখন পাহাড় থেকে নেমে আসে এক দঙ্গল কাদামাটি, পরিবারসুদ্ধ সবার জীবন কেড়ে নেয়। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই পাহাড়ের নিচে থাকা ছোট খুপরিঘরেই বাস করতে বাধ্য হয়। প্রতিবছরই পাহাড়ধসের এমন দুঃখজনক বহু ঘটনা ঘটে। এ বছর এরই মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি জেলায় অর্ধডজন পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। প্রাণও হারিয়েছে অনেকে। পাহাড়ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল চট্টগ্রামে ২০০৭ সালের জুন মাসে। সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিল ১২৭ জন। গত বছরও ব্যাপক পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে এবং চার সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬৮ জনের অকালমৃত্যু হয়েছে। তখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর সরকার পাহাড়ধসের কারণ খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল। ৯ মাস ধরে অনুসন্ধানের পর সেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে সম্ভাব্য কারণগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বাস্তব অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হবে কি, নাকি আগের সব প্রতিবেদনের মতোই এটিও ফাইলচাপা পড়ে যাবে?
জানা যায়, এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর সহায়তায় কিছু প্রভাবশালী লোক পাহাড়ের নিচে সরকারি জমিতে খুপরিঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়। ভাড়া কম হওয়ায় দরিদ্র লোকজন সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়। বড় বৃষ্টিপাতের আগে কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলে এবং তাদের দায়িত্ব সারে। মাইকিং শুনেও অনেকের পক্ষে অন্যত্র সরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাদেরই ভাগ্যে নেমে আসে এমন আকস্মিক মৃত্যু। অথচ আমাদের প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারেনি। কমিটির অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে, পাহাড়ধসে করুণ মৃত্যুর জন্য এই অবৈধ বসতি স্থাপন মূলত দায়ী। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের গাছপালা কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া, রক্ষাবেষ্টনী ও নালা না থাকা ইত্যাদি। আগের প্রতিবেদনগুলোতেও একই কথা বলা হয়েছিল এবং পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানি ঠেকাতে একই ধরনের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ কোথায়? এখনো চলছে অবাধে বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা। যাদের তা নিয়ন্ত্রণ করার কথা, অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও। জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাহাড় কাটা নিয়ে খবরের কাগজগুলোতে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু কমিটির পর কমিটি করে কোনো লাভ হবে না। প্রয়োজন এসব কমিটির সুপারিশগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার সে অনুযায়ী দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।