রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ৯ দফা দাবিও জানিয়েছে তারা। দুই সহপাঠীকে হারিয়ে সড়কে নামা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা স্বীকার করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে বলেছেন। টানা চতুর্থ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় বিড়ম্বনায় পড়ে শহরবাসী। এদিকে শিক্ষার্থীদের চাপা দেওয়া দুই বাসের নিবন্ধন সাময়িকভাবে বাতিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এই দুটি বাসের একটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১৮ মে। রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৯ মে। ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদও শেষ হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। অর্থাৎ বাসটি ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছিল। অন্য আরেকটি প্রতিবেদনে জানা যায়, জাবালে নূর পরিবহনের আটক চালকদের কারো বাস চালানোর লাইসেন্স ছিল না। এদিকে কুমিল্লায় দুই ছাত্রীর ওপর ট্রাক উঠে যাওয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহনে অব্যবস্থাপনা নিয়ে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অবৈধ গাড়িচালকদের ধরতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানী ও নগর পরিবহনে কোনোভাবেই শৃঙ্খলা আনা যাচ্ছে না। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষেরই আইনভঙ্গের প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলেই যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নগর পরিবহনে সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির অনুপস্থিতির কারণেই একচ্ছত্র ব্যবসা করছে বেসরকারি বাস কম্পানিগুলো। যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলেছে তারা। সিটিং সার্ভিসের নামে অরাজক ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। বাসভাড়ায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। একেক কম্পানি একেক ধরনের ভাড়া আদায় করে। এসব বাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোনো হাফ ভাড়া নেই। ভাড়া আদায়ের নামে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। অথচ যখন টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা ছিল, তখন সব বাস নির্দিষ্ট স্টপেজে থামত।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতা ও গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল গত বছর মার্চ মাসে। প্রায় দেড় বছর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেই আইনের অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইনের খসড়াটি এখন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর তা পাস করতে সংসদে তোলা হবে।
রাজধানী সহ নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত আইন পাস ও সব রুটে বিআরটিসির বাস চালু করা গেলে বেসরকারি বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে।