এ বছর গ্রীষ্মকালে গরম তুলনামূলকভাবে কমই অনুভূত হয়েছে। পুরো গ্রীষ্মকালই কমবেশি বৃষ্টিপাত ছিল। কিন্তু শ্রাবণ মাসে এসে হঠাৎ করেই বৃষ্টিপাত কমে গেছে। গত এক সপ্তাহ বৃষ্টিপাত ছিল খুবই কম। বরং কাঠফাটা রোদ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সারা দেশেই রীতিমতো দাবদাহ বিরাজ করেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমের অনুভূতি ছিল আরো বেশি, ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছিল, সামান্য বৃষ্টি হতে পারে, তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে এবং তাতে গরম অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু শুক্রবারও মানুষ গরমে হাঁসফাঁস করেছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ায় দুর্ভোগ অনেক বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই আবহাওয়া ক্রমে চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। ঠাণ্ডা ও গরমের তীব্রতাও বাড়ছে। বাস্তবেও বিজ্ঞানীদের এমন দাবির সত্যতা মিলছে। উত্তর মেরুর কাছাকাছি থাকা শীতপ্রধান অনেক দেশেই এ বছর রেকর্ড গরম পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনে দাবানলে হাজার হাজার একর বন পুড়ে গেছে। আগুন এখনো জ্বলছে। কানাডায় তাপপ্রবাহে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জাপানে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মারা গেছে দুই শতাধিক মানুষ। কিছুদিন আগে ভারতে ধূলিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানি হয়েছে। উত্তর ভারত ও নেপালে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আরো অনেক দেশেই এ রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আমরাও এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের বাইরে নই। যেকোনো সময় যেকোনো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে পড়তে পারি। শ্রাবণ মাসের এই অস্বাভাবিক গরম তেমনই একটি ঘটনা। তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিক্রিয়া বা দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা ক্রমে আরো বাড়াতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা রুখতে পারব না; কিন্তু তার ক্ষয়ক্ষতি যেন কম হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই প্রচেষ্টায় আমাদের ঘাটতি সীমাহীন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। অনেক নিচু এলাকা বা দ্বীপদেশ এরই মধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে। আমাদের অনেক উপকূলীয় এলাকা এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রবল হুমকির মুখে। একটু অস্বাভাবিক জোয়ার হলেও অনেক এলাকা তলিয়ে যায়, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
দাবদাহ বা গরমে হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। সেসব সমস্যার ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা বেড়ে যায় বলে মানুষ যেখানে-সেখানে পানি পান করে। অবিশুদ্ধ পানি পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। পাশাপাশি অস্বাভাবিক গরম মোকাবেলায় মানুষকে সচেতনও করতে হবে।