কাজিরবাজার ডেস্ক :
চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনার তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার দিনভর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই ফ্লাইটের দায়িত্বে থাকা পাইলট ও কেবিন ক্রুদের লিখিত জবানবন্দী নিয়েছে। এতে তারা উড়োজাহাজের ভেতর শ্বাসরুদ্ধকর সেই ৩০ মিনিটের ভয়ঙ্কর মুহূর্তের বিবরণ এবং কেবিন ক্রুদের সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে সবাইকে নিরাপদে বের করে আনার কাহিনী তুলে ধরেন। আলোচিত ওই ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরও তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে পারেনি- কী কারণে মাহদী নামের ওই যাত্রী এমন জিম্মি নাটকের চেষ্টা করেছিল। এ সম্পর্কে বিমান প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে স্পষ্টতই বলেছেন, তদন্তের আগে কিছুই বলা যাবে না। আগামী ৫ দিনের মধ্যে জানা যাবে প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল। ব্রিফিংয়ের আগে হজরত শাহজালাল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের যাত্রীদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সরেজমিনে অবহিত করা হয়। তাদের ভাষায়- বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ধরনের ত্র“টি ছিল না। তারপরও কিভাবে মাহাদীর মতো যাত্রী কথিত পিস্তল নিয়ে বিমানে ওঠার সুযোগ পেলো সেটাই ভাবিয়ে তুলেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেও। এ ঘটনায় নিহত পলাশ ওরফে মাহাদীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা ওই যুবকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্যাদি সম্পর্কেও খোঁজ খবর নিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। র্যাবের দাবি- অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরদ্ধে একটি নারী কেলেঙ্কারি ও অপরাধের অভিযোগে মামলা মোকদ্দমা ও জেল খাটার রেকর্ড আছে। একাধিক বিয়ে করার দায়ে আলোচিত ওই যুবক চিত্রনায়িকা শিমলার সঙ্গে বিয়ে ও বিচ্ছেদের পরই অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ আচরণ শুরু করে বলে বাবা-মায়ের অভিযোগ। রবিবার ককপিটের কাছে দাঁড়িয়েও মাহাদী চিৎকার করে বলতে থাকেন-তার স্ত্রী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু বলতে চান। কিন্তু সে কি বলতে চেয়েছিল সেটা অজানাই থেকে গেলো। মাহাদীর বুকে কোন বোমা বাধা ছিল না। তার হাতের ঘড়ি খুলে বুকে বেঁধে রেখেছিল।
উল্লেখ্য, রবিবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই যাত্রী হিসেবে থাকা পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদীর কবলে পড়ে বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটি। চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটির। ওই অবস্থায় বিমানের পাইলট চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিমানটি চট্টগ্রামে অবতরণ করলে যাত্রীদের সবাইকে নামিয়ে আনা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা টান টান উত্তেজনার পর আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটে। সেনা ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পিস্তলধারী ওই যুবক নিহত হয়েছেন। সে সময় তারা বলেছিলেন, নিহত যুবক নিজেকে ‘মাহাদী’ বলে পরিচয় দিয়েছে, তার বয়স ২৬/২৭ বছর। আর চট্টগ্রামের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই যুবকের কাছে পাওয়া পিস্তলটি খেলনা। এরপর সোমবার সকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, নিহত যুবকের আঙুলের ছাপ তাদের ক্রিমিনাল ডেটাবেজে থাকা এক অপরাধীর সঙ্গে মিলে গেছে।
এ অবস্থায় প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল সেটা জানতে চাইলে ওই ফ্লাইটে থাকা এক কেবিন ক্রু লোমহর্ষক ও শ্বাস্রুদ্ধকর ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান- ঢাকা থেকে ফ্লাইটটি টেকঅফের ঠিক দশ মিনিটের মাথায় ১৫ হাজার ফুট উপরে উঠে যায়। বিজনেস ক্লাসে বসা ৯ যাত্রী। আন্তর্জাতিক যাত্রী ছিল ৫৮ জন। অভ্যন্তরীণ যাত্রী ছিল ৭৫ জন। ৫ বিদেশী যাত্রীও ছিল। ফ্লাইটের ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন শফিউল ও ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির। কেবিন ক্রু ছিলেন- নিম্মি, হুসনে আরা, সাগর, সাকুর ও বিথী। আলোচিত যাত্রী পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদী নামে বসা ছিল ইকোনমি ক্লাসের ১৭-এ নং আসনে। একজন কেবিন ক্রু দেখতে পান হঠাৎ মাহাদী নিজের আসন ছেড়ে বিজনেস ক্লাসের একটি সিটে বসে নিজের সঙ্গে থাকা হ্যান্ডব্যাগে পিস্তল ও বোমা আছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় তিনি ককপিটের দরজা খুলে পাইলটের সঙ্গে কথা বলার বায়না ধরেন। যদি কথা বলতে না দেয়া হয় তাহলে ফ্লাইট বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এ পর্যায়ে কেবিন ক্রুদের একজন তার আড়ালে গিয়ে ককপিটে থাকা পাইলটের জরুরী কোড সংকেত পাঠান। এ সময় পাইলট তাকে অত্যন্ত সুকৌশলে ঠা-া মাথায় মাহাদীর কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। কেবিন ক্রুরা সেভাবেই হ্যান্ডেল করছিল তাকে। এর মধ্যে মাহাদী একবার ককপিটের দরজার কাছে গিয়ে পটকা জাতীয় কিছু ফোটান। তাতে ব্কিট শব্দ হলে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় কেবিন ক্রুরা তাকে ঘিরে তার সমস্যা জানার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে আশ্বস্ত করা হয়। ওদিকে মাহাদীকে কেবিন ক্রুদের স্েঙ্গ আলোচনায় মশগুল রেখে প্ইালট জরুরী অবতরণের মেসেজ পাঠান টাওয়ারে। তখন সেখানে হাজির হয় এপিবিএন, র্যাব, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থায় উড়োজাহাজটি অবতরণের পর পরই কেবিন ক্রুরা অত্যন্ত জরুরী নির্গমন পথে যাত্রীদের বের হয়ে যাবার ইঙ্গিত দেন। এতে যাত্রীরা একে একে সব বের হয়ে আসে। এক পর্যায়ে পাইলট দুজনও কৌশলে বের হয়ে আসেন। তাদের অনুসরণ করে ৪ কেবিন ক্রুও বের হয়ে আসেন। কিন্তু মাহাদীর সঙ্গে থেকে যান সাগর নামের এক সাহসী কেবিন ক্রু। যিনি নিজে মাহাদীকে আগলে রেখে অন্যদের প্রাণে বাঁচার সুযোগ করে দেন। তখন মাহাদী কিছুটা ঘাবড়ে যায়। এ সময় সে সাগরকে ইউনিফর্ম খুলতে বলে। অনন্যপায় হয়ে সাগর তাই করেন। এ সময় মাহাদী জানতে চায় ফ্লাইটের লাইট কোথায় সাগর তা পেছনে রয়েছে বলে উত্তর দিয়ে সেটা অন করতে জাহাজের পেছনের দিকে ছুটে গিয়ে ্এক দৌড়ে বের হয়ে আসেন। খালি গায়ে সাগর বের হয়ে আসার পর একাকী হয়ে পড়ে মাহাদী । বিমান কেবিন ক্রু এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দস্তগীরের মতে-জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় কেবিন ক্রুরা যাত্রীদের রক্ষা করেছেন। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
এদিকে ভেতরে যখন এমন নাটকীয় কা- চলছিল তখন বাইরে থেকে বিমান বাহিনীর এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান ও সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমানের নেতৃত্বে চলছিল অভিযানের প্রস্তুতি। ওই অভিযানে আহত হয় মাহাদী এবং বাইরে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু ঘটে।
ঘটনার পর সে রাতেই মাহাদীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি পরীক্ষা করে সেটি খেলনা পিস্তল বলে জানিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, মাহাদীর কাছ থেকে পাওয়া পিস্তলটি একটি খেলনা পিস্তল। আমরা তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।
কে এই পলাশ॥ কমান্ডো অভিযানে নিহত বিমান ‘ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী’ মাহাদীর প্রকৃত নাম পলাশ আহমেদ (২৩)। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে। গ্রামের সবাই তাকে পলাশ নামেই চিনত। গ্রামের বাইরে পলাশ নিজেকে মাহাদী নামে পরিচয় দিত। পিতা পিয়ার জাহান সর্দার। পলাশ সোনারগাঁর তাহেরপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে সোনারগাঁ ডিগ্রী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। এরপর সে আর পড়াশোনা করেনি। সাত বছর আগে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণের মামলায় ২০ দিন কারাগারে ছিল পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদী। র্যাব জানিয়েছে, ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার নামে এক ব্যক্তি তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে পলাশ ওরফে মাহাদীর নামে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৪৪। ওই বছরের ২৮ মার্চ র্যাব তাকে গ্রেফতারের পর অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করে। এ সময় নেমরা মারমা নামে পলাশের এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। এ সম্পর্কে র্যাবের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আমরা তার প্রিভিয়াস ক্রিমিনাল রেকর্ড খতিয়ে দেখছি। অপহরণের ওই ঘটনায় পলাশ আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল বলে ভিকটিমের পরিবার তখন অভিযোগ করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমকে উদ্ধার এবং এক সহযোগীসহ পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এ বিষয়ে পলাশের বাবা পিয়ার জাহান সরদার বলেন, এক মেয়ের সঙ্গে পলাশের ভালবাসা ছিল। ওই মেয়ের বাবা মামলা করেছিল। সেই মামলায় পলাশ ২০ দিন কারাগারে ছিল। পরে জামিন করাই। পলাশের বাবা বলেন, আমার একটাই ছেলে। আমরা ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু মেয়ের বাবা রাজি হয় নাই। পরে আপোসের মাধ্যমে তারা মামলাটা তুলে নেয়। তিনি তার লাশ বাড়িতে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বাবা পিয়ার জাহান সর্দার। সোমবার কয়েকটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, পলাশ বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান। সে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই দুঃখজনক এবং আমাদের জন্য মানহানিকর। অপকর্মের জন্য পলাশের লাশ আমরা বাড়িতে আনতে চাই না।
চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট এবং একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় পলাশের প্রতি সবারই একটু বেশি ভালবাসা ছিল। এজন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পলাশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে একজন বাবা হিসেবে বলতে চাই, পলাশের লাশ আমি দেখতে চাই না। পলাশের খবর শোনার পর থেকে তার মা শয্যাশায়ী। তিনি কারও সঙ্গে কোন কথা বলতে পারছেন না। ছেলের অবাধ্যতা গুছিয়ে দিতে আল্লাহর কাছে নামাজের পর দোয়া করতাম। আল্লাহর কাছে অনেক চেয়েছি। তাকেও অনেক বুঝিয়েছি। তবে সে কথা শোনেনি।।
পিয়ার জাহানের দাবি- পলাশ তাদের অবাধ্য সন্তান। এর আগেও বিদেশে যাওয়ার কথা বলে সে অনেক টাকা নষ্ট করেছে। যে কারণে ছেলের সঙ্গে তিনি ঠিকমতো কথা বলতেন না। পলাশের বাবা বলেন, ‘গত ১০ মাস আগে চিত্রনায়িকা সিমলাকে নিয়ে পলাশ বাসায় আসে। তখন সে জানায় সিমলাকে নিয়ে এলাকায় বেড়াতে এসেছে। কিন্তু দেড় থেকে দুই মাস পর লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি তাদের বিয়ে হয়েছে। এর ঠিক দেড় থেকে দুই মাস পরে পলাশ আবারও সিমলাকে নিয়ে বাড়ি আসে। তখন জানায় সিমলাকে সে বিয়ে করেছে। প্রথমে না মানলেও পরবর্তীতে বিয়ে মেনে নেই এবং বউকে (সিমলা) বলি ছেলেকে ভাল করে তুলতে। এরপর পলাশের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হতো না। এর আগে পলাশ আরেকটি বিয়ে করে বগুড়ায়। তার একটি বাচ্চাও আছে। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। হঠাৎ গত রবিবার রাত একটার দিকে সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি দল আমাদের বাসায় আসে এবং বাড়ি তল্লাশি করে। পরে আমি ও আমার স্ত্রীকে স্থানীয় এক মুরব্বির জিম্মায় রেখে যায় পুলিশ। পিয়ার জাহান বলেন, অনেক দিন ধরেই সে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে নষ্ট করায় আমরা বাসার লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলাম। এর মধ্যে তিন-চার মাস সে মালয়েশিয়ায় ছিল। কিছুদিন আগে সে একটানা ২৫ দিন বাড়িতে ছিল। এ সময় সে নিয়মিত নামাজ পড়ত ও আজান দিত। এটা দেখে আমরা মনে করেছি ছেলে সুপথে ফিরে এসেছে। শুক্রবার দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়। যাওয়ার সময় ছেলেকে বলেছিলাম, টাকা-পয়সা নষ্ট কইরো না। সিমলা বর্তমানে মুম্বাইয়ে রয়েছে।
পিয়ার জাহান জানান, পলাশ গত ২০/২৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে আসে। সাধারণত সে বাড়িতে এসে এতদিন থাকত না। বাড়িতে আসার পর সে অনেকটা পাল্টে যায়। মসজিদে যাওয়া-আসা করে, এমনকি আজানও দিয়েছে। শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার মাকে বলে যায় ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যাচ্ছে। তবে দুবাই যাওয়ার বিষয়ে তার বাবাকে কিছু বলেননি পলাশ। আর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রথমে তারা কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। সোনারগাঁ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রবিবার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ছবিটি পলাশের বলে নিশ্চিত করে।
সংবাদ সন্মেলনে যা বলেন- মন্ত্রী, সচিব, চেয়ারম্যান ॥ এদিকে সোমবার দুপুরে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মহিবুল হক ও এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান ওই ঘটনা সম্পর্কে নিজস্ব বক্তব্য রাখেন। তিনজনেই বলেছেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। প্রকৃত ঘটনা জানতে হলে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
ওই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আজকেও আমরা পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। সাংবাদিকরাও পুরো বিষয়টি দেখেছেন। আসলে আমি কলিগদের থেকে জানলাম বিমান হাইজ্যাক হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের কথা বললাম। প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলে দেখলাম তিনি ঘটনাটি জানেন। কমান্ডো প্রসিড করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি (পিএম) সর্বক্ষণিক পুরো বিষয়টি মনিটর করেছেন। পরবর্তীতে আমরা জানলাম, সবাই নিরাপদে রয়েছে। তবে রবিবারের ঘটনার পর শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার আয়োজন পর্যালোচনা করে দেখে কোন ত্রুটি দেখা যায়নি। এখানে এমন কোন লিকেজ ছিল না বা এখনও নাই যে একজন যাত্রী এভাবে বিমানে যেতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই বিমানের চট্টগ্রামে নামার কথা ছিল, সে অনুযায়ীই নেমেছে; জরুরী অবতরণ করেনি।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোন সমন্বয়হীনতা রয়েছে কিনা- এই প্রশ্নে মাহবুব আলী বলেন, কিভাবে যাত্রীরা যায় আপনারা দেখেছেন। কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া এই ধরনের ঘটনা থেকে আমরা উদ্ধার হয়েছি। সংস্থাগুলোর মধ্যে কোন ধরনের সমন্বয়হীনতা নেই।
তাহলে অস্ত্রটা ভেতরে গেল কিভাবেÑ এই প্রশ্নে বিমান সচিব মহীবুল হক বলেন, সেটা অস্ত্র কি না আমরা ওয়াকিবহাল না। খেলনা পিস্তল কি না, যে কোন কিছু হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেছি, অন্য দশটা যাত্রীর মতো তাকেও (সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী) তল্লাশি করা হয়েছি। তার কাঁধে একটা ব্যাগ ছিল। সেটা স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে গেছে, কিন্তু সেখানে কিছু দেখা যায়নি। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে।
সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেন, বিমান থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর ‘সো কলড’ হাইজ্যাকার বিমানে একাই ছিল। আমরা সেদিন অনেক কিছুই শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাবে।