আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের আয় ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। অথচ বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প একটি অবহেলিত খাত; যদিও শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অপার সম্ভাবনার এই খাত নানা অবহেলায় বিকশিত হতে পারছে না। পর্যটনশিল্পকে আকর্ষণীয় ও উন্নত করে তুলতে সরকারি পর্যায়েও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেসব দেশে সমুদ্রসৈকত আছে, সেখানে সারা বছর পর্যটকের আধিক্য থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশে। সমুদ্রসৈকত শুধু নয়, আমাদের দেশে পাহাড়ও আছে, আছে দর্শনীয় অনেক ঐতিহাসিক পর্যটন স্পট। তার পরও আমরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছি না।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ কেন আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারছে না সে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট বা টিএসএর মাধ্যমে পর্যটন খাতের আন্তর্জাতিক মান, ধারণা ও সংজ্ঞা অনুযায়ী পণ্য ও সেবার মূল্যায়ন করা হয়। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডাব্লিউটিও) নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ টিএসএ তৈরি করলেও বাংলাদেশে গত চার দশকেও এর জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। এই একটি কাজ করা সম্ভব হলেই আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাত ও প্রতিটি উপখাতের অবদান সম্পর্কে জানা যাবে। পর্যটন নিয়ে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করা আরো সহজ হবে। একই সঙ্গে পর্যটনে আমাদের কোন খাতটি দুর্বল, কোনটি সবল তা-ও চিহ্নিত হবে। শুধু বিদেশি পর্যটক নয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতে কত ব্যয় করে এবং প্রতিবছর কতজন দেশের ভেতরে ভ্রমণ করে, তা বের করা যাবে। বাংলাদেশের কোনো পর্যটন তথ্যভাণ্ডার নেই। নেই পর্যটন কাঠামো। নতুন অর্থায়ন যেমন হচ্ছে না, তেমনি নেই সঠিক পরিকল্পনা। ব্যবস্থাপনাও দুর্বল। সেবার মান নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান করণীয় হচ্ছে, পর্যটন স্পটগুলোকে প্রডাক্ট হিসেবে তৈরি করতে হবে। বিপণনের আগে পর্যটন পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা। তা ছাড়া পর্যটন ব্যবস্থাপনা অতি গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর যথাযথ উন্নয়ন করা সম্ভব হলে বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি দেশের পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করা সহজ হবে।
আমরা আশা করব, পর্যটনশিল্পের অবকাঠামো ও পর্যটন প্রডাক্ট উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবে।