আম সংরক্ষণের উদ্যোগ জরুরী

42

চলতি মৌসুমে সারা দেশেই প্রচুর আমের ফলন হয়েছে। বৈশাখের ঝড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ আম গাছ থেকে ঝরে পড়ার পরও এবার আমের ফলন অনেক বেশি। রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমের চাষ বেড়েছে। গত ছয় বছরে শুধু রাজশাহীতেই আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন। আম গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এবার হেক্টরপ্রতি গড়ে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। সে হিসাবে শুধু রাজশাহীতেই উৎপাদন ধরা হয়েছে দুই লাখ আট হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আমগাছের পরিমাণ প্রায় ২২ লাখ। জেলায় প্রায় আড়াই শ জাতের আম চাষ হয়। এর বাইরে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নতমানের আম চাষ হয়। রংপুরে এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। ঢাকার কাছাকাছি সখীপুর উপজেলায়ই ২৬০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমের চাষ হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার দেশে আমের ফলন ভালো। বাজারে দাম কম থাকায় ভোক্তারা খুশি হলেও ব্যবসায়ী ও চাষিদের মাথায় হাত। বাজারে আমের দাম না থাকায় অনেকেই আমের ব্যবসা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।
আম একটি মৌসুমি ফল। একেক জাতের আম একেক সময় পাকে। রাজশাহী এলাকাকে আমের রাজধানী হিসেবে ধরা হয়। দেশের সর্বত্র এখান থেকে আমের চালান যায়। কিন্তু চলতি মৌসুমে আমের ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে সেভাবে চাহিদা তৈরি হয়নি। গত বছরের চেয়ে অর্ধেক দামে এবার পাইকারি বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আমের জোগান পর্যাপ্ত থাকলেও ক্রেতা নেই। তদুপরি এবার আমের ভরা মৌসুম পড়েছিল রোজার মাসে। দাম কম হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ও চাষি উৎসাহ হারাতে শুরু করেছেন।
নতুন নতুন জাত আসার ফলে আমসহ সব ধরনের মৌসুমি ফলের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু দেশে ফল প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি। সরকারি পর্যায়ে রাজশাহী অঞ্চলে এ ধরনের কারখানা গড়ে তোলা গেলে প্রক্রিয়াজাত আমও দেশের বাইরে রপ্তানি করা যেত। তাতে আম চাষিদেরও স্বার্থ সংরক্ষিত হতো। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দিতে হবে। মৌসুমি আমসহ ফলের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হবে বলে আমরা মনে করি।