কাজিরবাজার ডেস্ক :
রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের প্রতিশ্র“ত মাহে রমজানের আজ ১৬তম দিবস। আল্লাহর ভয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতের আকুল প্রত্যাশায় আমাদের এই সিয়াম সাধনা। আমাদের অন্তরে প্রকম্পমান কিয়ামতের ভয়াবহতা। আজ কিয়ামত সম্পর্কে ২/৪টি কথা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? আপনি তাদের বলে দিন, এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের ওপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। (সূরা আ’রাফ-১৮৭)
বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর রেওয়ায়েতক্রমে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, রসূলে করীম (স.) কিয়ামতের আকস্মিক আগমন সম্পর্কে বলেছেন, মানুষ নিজ নিজ কাজে পরিব্যস্ত থাকবে। এক লোক খরিদ্দারকে দেখাবার উদ্দেশে কাপড়ের থান খুলে সামনে ধরে থাকবে, সে (সওদাগর) এ বিষয়টিও সাব্যস্ত করতে পারবে না, এরই মধ্যে কিয়ামত এসে যাবে। এক লোক তার উটনীর দুধ দুইয়ে নিয়ে যেতে থাকবে এবং তখনও তা ব্যবহার করতে পারবে না, এরই মধ্যে কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ নিজের হাউজ মেরামত করতে থাকবে তা থেকে অবসর হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। কেউ হয়তো খাবার লোকমা হাতে তুলে নেবে, তা মুখে দেয়ার পূর্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে। (রুহল-মা’আনী)
যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত মৃত্যুর তারিখ ও সময়-ক্ষণ অনির্দিষ্ট ও গোপন রাখার মাঝে বিরাট তাৎপর্য নিহিত রয়েছে, তেমনিভাবে কিয়ামতকেও যা সমগ্র বিশ্বের সামগ্রিক মৃত্যুরই নামান্তর, তাকে গোপন এবং অনির্দিষ্ট রাখার মধ্যেও বিপুল রহস্য ও তাৎপর্য বিদ্যমান। তা না হলে একে তো এতেই বিশ্বাসীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে এবং পার্থিব যাবতীয় কাজকর্ম অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তদুপরি অবিশ্বাসীরা সুদীর্ঘ সময়ের কথা শুনে ঠাট্টা বিদ্রƒপের সুযোগ পাবে এবং তাদের ঔদ্ধত্য অধিকতর বৃদ্ধি পাবে।
সূরা মু’মিন-এর ৫৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, কেয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই, কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না। কিয়ামত দিবসের পরিস্থিতি সম্বন্ধে সূরা লোকমানের ৩৩নং আয়াতে বলা হয়েছে: হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তান যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।
সূরা মু’মিন-এর ৫১ ও ৫২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিয়ামতের কঠিন দিনে তিনি মুমিনদের সহায় হবেন। ইরশাদ হচ্ছে: আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দণ্ডায়মান হওয়ার দিবসে। সেদিন যালেমদের ওজর আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্য থাকবে মন্দ গৃহ।’ এমন কোন জনপদ নেই, যাকে আমি কিয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না। এটা তো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। (বনী ইস্রাইল-৫৮)।
কিয়ামতের পূর্বাভাষ সম্পর্কে সূরা নমলের ৮২নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন: যখন প্রতিশ্র“তি (কিয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এ কারণে যে, মানুষ আমার নিদর্শনসমূহ বিশ্বাস করত না।
মুসনাদে আহমদ নামক বিখ্যাত হাদীস সংকলনে হযরত হুযায়ফা (রা.) বর্ণিত রেওয়ায়েতে রাসূলূল্লাহ্ (স.) বলেন, যে পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না। (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়া। (২) ধূম্র নির্গত হওয়া (৩) অদ্ভুত একটি জীবের আবির্ভাব হওয়া (৪) ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব হওয়া (৫) ঈসা (আ)-এর অবতরণ (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব (৭) তিনটি চন্দ্র গ্রহণ (ক) পশ্চিমে (খ) পূর্বে এবং (গ) আরব উপদ্বীপে। (৮) এক অগ্নি যা আদন থেকে নির্গত হবে এবং সব মানুষকে হাশরের মাঠে নিয়ে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্য অবস্থান করবে, অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে।
মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ (রহ.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ (স.)-এর মুখে একটি অবিস্মরণীয় হাদীস শ্রবণ করেছি। রসূল (স.) বলেন, কিয়ামতের সর্বশেষ আলামতসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। সূর্য উপরে উঠার পর ভূগর্ভের জীব নির্গত হবে। এই আলামতদ্বয়ের মধ্যে যে কোন একটি প্রকাশ হওয়ার অব্যবহিত পরেই কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। (ইবনে কাসীর)।