কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান মাদকবিরোধী অভিযান কোনো একক সংস্থার তালিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বলেছেন, গোয়েন্দারা তাদের নামই তালিকাভুক্ত করেছেন যারা মাদকের কারবারে জড়িত এবং এতে সহযোগিতা করছেন।
কাউকেই হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী দাবি করেন, প্রতিটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালিয়েছে আত্মরক্ষায়। প্রতিটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাই তদন্ত চলছে জানিয়ে অন্যায় হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন কামাল।
সতর্কতার সঙ্গে নাম বাছাই : যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে, তাদের নাম সতর্কতার সঙ্গে যাচাই বাছাইয়ের দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু একটি গোয়েন্দা সংস্থা নয় মোট পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা এই তালিকা তৈরি করেছি।’
‘এ তালিকায় যে নামগুলো কমন পড়েছে সেই তালিকা নিয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এর সাথে আমরা ব্যপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থাও করেছি। যাতে করে মাদকের ডিমান্ড কমে যায়। মাদকবিরোধ অভিযানের পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধেও উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান মন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা পেলেও মিয়ানমার কোনো সহযোগিতা করছে না বলেও জানান তিনি।
‘আমি নিজে মিয়ানমারের সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি।’
‘গুলি আত্মরক্ষায়’ মন্ত্রীর দাবি : প্রতিটি ঘটনাতেই মাদক কারবারিরা আগে গুলি চালিয়েছে। আর আত্মরক্ষায় চালানো পাল্টা গুলিতেই প্রাণ গেছে সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের। ‘মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে খালি হাতে গেলে কেউ ফিরে আসবে না। এজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র হাতে যান এবং সেখানে মাদক ব্যবসায়ীরা যখন ফায়ার করছে তখন উল্টো ফায়ার করলে এ ধরনের মৃত্যের ঘটনা ঘটছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মাদকবিরোধী অভিযানে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যান বার্নিকাট। মন্ত্রী বলেন, ‘এ অভিযানের প্রশংসা করেছেন কিন্তু এভাবে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি (বার্নিকাট)।’
‘বার্নিকোট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন এ ঘটনায় আরও কতজন লোক জেলে আছেন এবং কতজন লোক মৃত্যের ঘটনা ঘটেছে। আমরা তার পূর্ণ বিবরণ তাকে দিয়েছি।’
‘তিনি বলেছেন, মাদকের বিস্তার বন্ধ করতে হবে। তবে যারা মারা গেছেন তাদের বিষয়ে আরও একটু কেয়ারফুল (সতর্ক) হওয়ার জন্য আমাদেরকে বলেছেন।’
কাউকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়নি : ‘আমরা বার্নিকাটকে বলেছি, যেখানেই গানফায়ার হচ্ছে সেখানে একটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে তদন্ত করছে। কোনো জায়গায় অন্যায়ভাবে হত্যার ঘটনা ঘটলে আমাদের বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘আমাদের সরকার হত্যা করার জন্য কখনই আমাদেরকে নির্দেশ দেননি। কাউকে হত্যা করার জন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে না। সবাইকে শুধরানোর জন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে।’
‘জঙ্গি এবং সন্ত্রাস যেভাবে আমাদের জনগণকে নিয়ে আমরা মোকাবেলা করেছি সেভাবেই আমাদের জনগণকে নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।’
মাদকবিরোধী অভিযানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মনে করছেন মাদক যেভাবে বিস্তার লাভ করছে এটা যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত হারিয়ে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাকে (বার্নিকাট) বলেছি, কোনো ক্রসফায়ার আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করেনি। কোনো হত্যাকাণ্ড আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করেনি।’
‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী লিস্ট নিয়ে তাদের বাড়িতে যাচ্ছেন কিন্তু তারা যখন স্যারেন্ডার করতে অস্বীকার করে উল্টো ফায়ার ওপেন করছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালাচ্ছে। তাকে কিছু মৃত্যের ঘটনা ঘটছে।’
‘শুধুমাত্র নিহত নয় বরং গ্রেপ্তার হচ্ছে প্রচুর। এ পর্যন্ত অভিযান চলাকালে প্রায় ১৩ হাজার মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।’